ধর্ষণ মামলার আসামি মেয়রপুত্রের জামিন বাতিল

shoriotpur
shoriotpur

শরীয়তপুরের জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে ধর্ষণ মামলার আসামি মাসুদ ব্যাপারীর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বাদী-বিবাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য শুনে মাসুদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জাজিরার এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলার আসামি মাসুদ ব্যাপারী। তাঁকে ৮ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মরিয়ম মুন মঞ্জুরি জামিনের আদেশ দেন। ওই দিনই শরীয়তপুর জেলা কারাগার থেকে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। ধর্ষণ মামলায় কারাগারে যাওয়ার আট দিনের মধ্যে জামিন দেওয়ায় শরীয়তপুরের বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এর প্রতিবাদে বুধবার শরীয়তপুরের বিভিন্ন সংগঠন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিন দিনের মাথায় তাঁর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হলো। এ সময় ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) মীর্জা হযরত আলী বলেন, ‘জামিনের আদেশটি ছিল অস্পষ্ট। প্রথম শুনেছি জামিন দেওয়া হয়েছে অভিযোগপত্র দাখিল পর্যন্ত। কিন্তু আজ নথিতে দেখলাম অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল ১১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত। অথচ আসামিপক্ষের আইনজীবী ওই দিন অন্তর্বর্তী জামিনের আবেদনই করেননি। ৮ জুলাই যেদিন মাসুদ ব্যাপারীকে জামিন দেওয়া হয়, ওই দিন আমি রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে অংশ নিতে পারিনি। আমাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি ছাড়া এ মামলায় জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ছাড়া মামলার নথিও তলব করা হয়নি। ওই দিন বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই বিচারকের নজরে আনি। তখন তিনি সন্তোষজনক জবাব দেননি।’ তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার জেলা ও দায়রা জজের আদালতে ওই সব বিষয় উপস্থাপন করে আসামির জামিন বাতিলের আবেদন করি। জেলা ও দায়রা জজ আসামির অন্তর্বর্তী জামিন বাতিল করে জেলা কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী কামরুজ্জামান নজরুল বলেন, ‘জামিনের আবেদন করলে আদালত আসামিকে তিন দিনের অন্তর্বর্তী জামিন দেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জামিন থাকায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। তখন আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। আমার মক্কেল ও তাঁর পরিবার রাজনীতি করেন। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত, তাঁদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তাঁরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী আজিজুর রহমান রোকন বলেন, জামিন যখন মঞ্জুর হয়, তখন জামিনের বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। জামিনটি স্থায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন, ধার্য তারিখ পর্যন্ত, নাকি অভিযোগপত্র পর্যন্ত ছিল, তা জানানো হয়নি। যখন পত্রপত্রিকায় জামিনের বিষয়টি আসে, সামাজিক আন্দোলন শুরু হয়, তখন বুধবার রাতে হঠাৎ শুনতে পাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আসামির অন্তর্বর্তীকালীন জামিন ছিল।

বাদীপক্ষের আরেক আইনজীবী মোতালেব মাদবর বলেন, নিয়ম মোতাবেক জামিনটি হয়নি। এসব মামলায় নথি তলব করতে হয়। কিন্তু বিচারক নথি তলব না করেই তড়িঘড়ি করে জামিন দিয়েছেন। তখন জামিনের আদেশের কপিটিও কারও কাছে ছিল না। ওই আদেশটি থাকলে এখন ধোঁয়াশা সৃষ্টি হতো না।

পুলিশ জানায়, গত ২৯ জুন জাজিরার একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় জাজিরা পৌরসভার মেয়র ইউনুছ ব্যাপারীর ছেলে মাসুদ ব্যাপারীকে। ওই ঘটনায় ৩০ জুন জাজিরা থানায় মামলা করা হয়।