পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব: গ্রেপ্তার ২, ইউপি সদস্যকে কারণ দর্শাও

‘পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে’, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার একটি গ্রাম থেকে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৮। আটকের পর ওই কিশোরকে র‍্যাব-৮-এর ফরিদপুর ক্যাম্পে আনা হয়েছে।
র‍্যাব-৮-এর ফরিদপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর শেখ নাজমুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণে মাথা লাগবে বলে যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, সে বিষয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতুর কর্তৃপক্ষের একটি চিঠি পাওয়ার পর তদন্তকাজ শুরু করে র‍্যাব। তদন্তে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়ে গুজব ছড়ানোয় ওই কিশোরের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এতে জানা গেছে, গত ২৮ মে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে গুজবটি ছড়ায় ওই কিশোর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, অন্যদের কাছ থেকে শুনে পদ্মা সেতুর নির্মাণ নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে।
মেজর নাজমুল আরেফিন বলেন, আটকের পর ওই কিশোরকে ফরিদপুরে আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পাংশা থানায় র‍্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হবে। এরপর পাংশা থানায় হস্তান্তর করা হবে।

সেতু নিয়ে গুজবের অভিযোগে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় পুলিশ গতকাল বুধবার বিকেলে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। আজ বেলা একটার দিকে ভোলার পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার এসব তথ্য দেন।

ভোলার পুলিশ জানায়, চরফ্যাশনের চরমাদ্রাজ এলাকার চরফ্যাশন-বেতুয়া সড়ক থেকে ‘মাথা কাটার গুজব’ ছড়ানোর অভিযোগে আ. শহিদ হাওলাদার (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় শহীদের কাছ থেকে গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে। আ. শহিদ হাওলাদারের বাড়ি উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের চর নিউটন মৌজার মোহাম্মদপুর গ্রামে।

পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ফোন করে, ফেসবুকে পোস্ট করে ও ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে কিছু গুজব সৃষ্টিকারী ‘পদ্মা সেতুতে এক লাখ মাথা লাগবে’, ‘শিশুদের মাথা কেটে নেওয়া হচ্ছে’, ‘ছেলেধরারা শিশুদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে’, ‘বস্তায় ভরার সময় তিন শিশু গ্রেপ্তার’, এমন গুজব ছড়িয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এ গুজব ছড়ানোর ফলে বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতি অর্ধেকে নেমে এসেছে। মানুষের শান্তির ঘুম নষ্ট হয়েছে। সন্ধ্যা হতে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, ভোলায় মোট চারজন এমন আতঙ্ক ধরানো গুজব ছড়াচ্ছে। এর একজন বিদেশে থাকে।

এসপি বলেন, আ. শহিদ হাওলাদার ওই চারজনের একজন। আ.শহিদকে গুজব ছড়ানোর কাজে কোনো চক্র উৎসাহিত করেছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর মো. শাফিন আহমেদ, মো. রাসেলুর রহমান, জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মো. সাব্বির হোসেন, চরফ্যাশন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সামসুল আরেফিন, গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক (ডিবি) শহিদুল ইসলাম।

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ফেসবুকে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তিনি ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য। নাম মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।
এ ঘটনায় হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন ওই ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যকে নিজ দপ্তরে ডেকে এনে এর কারণ জানতে চেয়েছেন। ওই সদস্যকে কারণ দর্শাও নোটিশ দিয়েছেন। আগামী তিন কর্ম দিবসের মধ্যে এর লিখিত জবাব চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফেসবুক তেমন চলাতে পারি না। পরিবারের ছেলেমেয়েরা আমার মোবাইল দিয়ে গেম খেলে। তারা হয়তো ভুলে এটি শেয়ার করতে পারে।’
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হয়ে এ ধরনের কাজ কী কারণে করব?’