তিন সমস্যার কারণে ঘাটে যানজট

প্রায় চার কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট মোড় এলাকা, রাজবাড়ী, ১২ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক
প্রায় চার কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট মোড় এলাকা, রাজবাড়ী, ১২ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রবেশদ্বার রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কমসংখ্যক ফেরি চলাচল, বৈরী আবহাওয়া ও নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে দুটি ঘাটে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, দ্রুত যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নিশ্চিত করতে এই নৌপথে কমপক্ষে ১২টি বড়, ৮টি ছোট ও মাঝারি মিলে ২০-২২টি ফেরি চালু থাকা দরকার। প্রতিবছরের মতো এ বছর ঈদুল ফিতরের সময় ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে ২০টি করা হয়। ঈদ-পরবর্তী সময়ে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে একটি বড় ফেরি, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে চারটি বড় ও দুটি মাঝারি ফেরি নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। ফলে এই নৌপথে ফেরি স্বল্পতা দেখা দেয়। ফেরি স্বল্পতা ছাড়াও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতিটি ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়ক পিচ্ছিল হওয়ায় ফেরিতে গাড়ি ওঠা-নামায় সমস্যা দেখা দেয়। গাড়িগুলো দ্রুত ফেরিতে উঠতে না পারায় অনেক সময় ব্যয় হচ্ছে। এ ছাড়া পদ্মায় পানি বাড়ায় তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। যে কারণে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগছে। এতে ফেরির ট্রিপের সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম। রাজবাড়ী, ১২ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম। রাজবাড়ী, ১২ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক

ঘাটসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দৌলতদিয়া ও পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ছয় হাজার গাড়ি পারাপার হয়। ঈদের সময় গাড়ি সংখ্যা বেড়ে হয় প্রায় ৮ হাজার। এত বিপুলসংখ্যক গাড়ি পারাপারে প্রতিদিন সরকার লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় করছে। সারা বছর ফেরির সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণ থাকলে ঘাটে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। সরকার এ বিষয়ে অবগত থাকলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। শুক্রবার দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় কয়েক শ গাড়ি আটকে প্রায় চার কিলোমিটার সড়কজুড়ে যানজট দেখা দেয়।

সকালে ঘাটের পরিস্থিতি দেখতে যান নবাগত জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবায়েত হায়াত শিপলু ও বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ রনি। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে যাওয়ার আগে দিলসাদ বেগম দৌলতদিয়া ঘাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন।

এ সময় বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি বড় ফেরির সঙ্গে বিভিন্ন আকারের ৮-১০টি ফেরি থাকলে ঘাটে কখনই যানজট সৃষ্টি হবে না। ঈদুল ফিতরের সময় এই নৌপথে ১১টি বড় ফেরি থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঈদের কয়েক দিন পর পর্যায়ক্রমে ৪টি বড় ফেরি ডকইয়ার্ডে পাঠানো হয়। বাকি ৭টির সঙ্গে ১টি মাঝারি ও ৭টি ছোট ফেরি দিয়ে গাড়ি পারাপার করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রতিদিন কোনো একটি ফেরি নিয়মিত সংস্কারকাজের জন্য বসে থাকছে।

দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কমসংখ্যক ফেরি চলাচল, বৈরী আবহাওয়া ও নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে দুটি ঘাটে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট মোড় এলাকা, রাজবাড়ী, ১২ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক
দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় কমসংখ্যক ফেরি চলাচল, বৈরী আবহাওয়া ও নদীতে প্রচণ্ড স্রোতের কারণে বেশ কয়েক দিন ধরে দুটি ঘাটে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের বাড়তি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাট মোড় এলাকা, রাজবাড়ী, ১২ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক

আবু আবদুল্লাহ রনি আরও বলেন, বর্তমানে ১৫টির মধ্যে চলছে ১৪টি ফেরি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ‘সন্ধ্যা মালতি’ নামে ইউটিলিটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ঠাঁই নেয় স্থানীয় কারখানায়। এর আগে তিন দিন বসে থাকার পর বুধবার রাতে বের হয় আরেক ইউটিলিটি বনলতা। ঈদের বেশ আগে চারটি বড় ফেরি এই নৌপথে আসবে। ফেরি স্বল্পতা ছাড়াও বৈরী আবহাওয়ার কারণে কয়েক দিন ধরে ফেরিতে গাড়ি ওঠানামায় সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া নদীতে প্রচণ্ড স্রোতে বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা পথ ঘুরে ঘাটে পৌঁছতে সময় লাগছে বেশি এবং ট্রিপ সংখ্যাও অনেক কমে গেছে। আগে ১৫টি ফেরি দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৯২ থেকে ১৯৫ ট্রিপ দেওয়া যেত। বর্তমানে সেখানে ট্রিপ হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭২টি।

জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহায় যাতে সুষ্ঠুভাবে যানবাহন এবং যাত্রী পারাপার নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয় মাথায় রেখে ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে কথা বলবেন। ঈদের অনেক আগে থেকেই ফেরি ও ঘাট ব্যবস্থা যাতে ঠিক থাকে, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন। এ ছাড়া আসন্ন বর্ষায় ফেরিঘাট যেন কোনো প্রকার ভাঙন বা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে না পড়ে, সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।