সিলেট-সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত

পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে বেড়েছে পানি। সড়ক ভেঙে সুরমা নদীর পানি ঢুকছে লোকালয়ে। গতকাল বিকেলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে বেড়েছে পানি। সড়ক ভেঙে সুরমা নদীর পানি ঢুকছে লোকালয়ে। গতকাল বিকেলে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বৃষ্টি কম হওয়ায় সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও হাওরে বেড়েছে। এতে নতুন কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সিলেটে নতুন করে কোনো গ্রাম প্লাবিত না হলেও আগের পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার সাত উপজেলার প্রায় ১০০ গ্রাম এখন প্লাবিত রয়েছে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি গতকাল শুক্রবার বেলা তিনটায় বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এ ছাড়া দোয়ারাবাজার-ছাতক উপজেলার সড়কের কয়েকটি স্থান প্লাবিত হওয়ায় এই দুই উপজেলার সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেক এলাকায় নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো এলাকায় ঢলের পানিতে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় যানবাহন চলছে না।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার ১১ উপজেলায় ৩০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৩ হাজার ৭৬০ ব্যাগ শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে পাঁচটি উপজেলায়। এই শুকনা খাবার সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার ও জামালগঞ্জ উপজেলার বিতরণ করা হচ্ছে।

তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী জানান, গতকাল সকালে পানি কিছুটা কমলেও বিকেলে আবার বাড়তে শুরু করে। এ পর্যন্ত তারা ৪০০ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করছেন। উপজেলার সাতটি স্কুলে ৫০টির মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছে।

জামালগঞ্জ উপজেলার সদর, ফেনারবাক, বেহেলি ও সদর উত্তর ইউনিয়ন বেশি আক্রান্ত হয়েছে। শুক্রবারও নতুন করে কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানান সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজিব মাহমুদ। দোয়ারাবাজার উপজেলার সদর, লক্ষ্মীপুর ও সুরমা ইউনিয়ন বন্যায় বেশি আক্রান্ত হয়েছে।

ধরমপাশায় বন্যার পানি ধীরগতিতে নামতে শুরু করেছে। তবে উপজেলার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়কে হাঁটুপানি থাকায় চলাচল এখনো বন্ধ রয়েছে। উপজেলার ৩০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তবে সরকারিভাবে এখনো কোনো সহায়তা মেলেনি। ইউএনও মোহাম্মদ ওবায়দুর রহমান বলেন, ত্রাণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আজ থেকে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গতকাল বিকেলেও নবীনগর, ষোলঘর, কাজীর পয়েন্ট, উকিলপাড়া, মাছ বাজার, সবজি বাজার, মধ্যবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি ছিল। এসব এলাকার কিছু ঘরবাড়িতে পানি ঢুকেছে।

সদর উপজেলার গৌরারঙ্গ ইউনিয়নের গৌরারং গ্রামের তাজুর আলী (৫৫) বলেন, তাঁর ঘরে তিন দিন ধরে বন্যার পানি আছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন। কেউ তাঁদের গিয়ে দেখেনি, কোনো সহায়তা দেয়নি। একই গ্রামের চান বানু (৫২) বলেন, ‘ঘরে পানি। সাতজন মানুষ লইয়া আছি। কেউ এক ছাটাক চাউল দিচ্ছে না।’

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুইয়া জানিয়েছেন, শুক্রবার সুনামগঞ্জে কম বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সুরমা নদীর পানি কমেছে। তবে উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নামছে। বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

সিলেটের সাত উপজেলার প্রায় ১০০ গ্রাম এখন প্লাবিত রয়েছে। গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে। গতকালও গোয়াইনঘাট উপজেলার সঙ্গে জেলা শহরের সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে, জেলার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জ । এ দুই উপজেলায় অন্তত ৮০টি গ্রাম প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে। নৌকা ছাড়া যাতায়াত করা যাচ্ছে না। দুই উপজেলায় লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২০টি প্লাবিত অবস্থায় রয়েছে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান।

গোয়াইনঘাটের ইউএনও বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, নতুন করে ঢল না এলেও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত ছিল। উপজেলায় ত্রাণ সহায়তা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ, প্রতিনিধি, সিলেট ধরমপাশা]