নালিতাবাড়ীতে বৃষ্টি হলেই বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ শিশুদের

সড়কে সেতু না থাকায় এবং বিকল্প সরু রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকায় শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার আড়িলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা চলাচলের জন্য একটি সাঁকো নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

এলজিইডি, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, যোগানিয়া ইউনিয়নের কান্দাপাড় হয়ে দুগাঙ্গাপাড় সড়কের হাঁটুভাঙ্গা এলাকায় ২০০২ সালে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালে সেতুটি দেবে যায়। পরে যাতায়াতের জন্য দেবে যাওয়া সেতুর সঙ্গে আরও ১০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণ করে দেবে যাওয়া সেতুর সঙ্গে সংযোগ করা হয়। এক বছর পর সেই সেতুও দেবে যায়। এতে এই পথে চলাচলকারী সাতটি গ্রামের মানুষ দারুণ কষ্টে পড়েন। ২০১৮ সালে উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কার্যালয় থেকে হাঁটুভাঙ্গা এলাকায় ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। এতে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের কাজটি পায় ধ্রুব ট্রেড এজেন্সি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত জানুয়ারি মাসে ঠিকাদার পুরোনো সেতু ভেঙে নতুন সেতুর কাজ করতে গেলে এলাকাবাসী বাধা দেন। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু হলে ছয়–সাতজনের বসতবাড়ি ভেঙে ফেলতে হয়। তাঁরা বাড়ি না ভেঙে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৫ জন এলাকাবাসীর স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও এলজিইডির প্রকৌশলীর কাছে দেন।

এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ বন্ধ করে দেয়। সেতু নির্মাণ স্থানের ১০০ গজ পূর্ব দিকে আড়িলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১৯২ জন। শিক্ষক আছেন চারজন। দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ও চারজন শিক্ষক প্রতিনিয়ত সেতু না থাকায় পাশ দিয়ে বিকল্প সরু রাস্তা দিয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া এই সরু রাস্তা দিয়ে এলাকাবাসী চলাচল করেন। গত কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে বিকল্প রাস্তার দুটি অংশে বড় বড় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। বিকল্প রাস্তা পানিতে ডুবে যায়। চলাচলের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাঁচ দিন ধরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা এখানে দ্রুত একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণের দাবি জানান।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবির হোসেন বলে, ‘সড়কে সেতু নেই। আমরা যে বিকল্প রাস্তা দিয়া যেতাম, তাও বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। এখন আমরা পাঁচ দিন ধরে কেউ ক্লাস করতে পারছি না। এখানে একটা সাঁকো হলে আমাদের ভালো হয়।’

কৃষক তহুর মিয়া বলেন, ‘এইডা কোনো উল্লেখযোগ্য বিল না। পানি যাওনের কোনো রাস্তাও নাই। এর লাইগা ৪০ মিটার সেতুর কোনো প্রয়োজন নাই। এতে আমগর বাড়িঘর সরাইতে হয়। আমরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়মু। তাই চেয়ারম্যান ও ইউএনও স্যারের কাছে ২০ মিটার সেতু নির্মাণের দাবি জানাইছি।’

প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ লাল মিয়া জানান, ‘সেতু না থাকায় বর্ষায় চলাচলে সমস্যা হতে পারে বুঝতে পেরে গত ৩০ জুন বিকল্প একটা বাঁশের সাঁকো নির্মাণের জন্য ইউএনও স্যারের কাছে আবেদন করেছি।’

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, সেতুর কাজ করতে গেলে এলাকাবাসী বাধার মুখে ঠিকাদার কাজ ফেলে চলে গেছেন। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু হলে ছয়–সাতটা বাড়িঘর ভাঙতে হবে। এলাকাবাসী সেতু আরও ছোট করে নির্মাণের দাবিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বর্ষা ছাড়া সারা বছর সেখানে পানি না থাকা এবং রাস্তা না থাকায় ছোট করে সেতু হলেও কোনো সমস্যা হবে না বলে তিনি মনে করেন।

ইউএনও আরিফুর রহমান বলেন, ‘এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়েছিলাম। দ্রুত উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’