কালিয়ায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে রাস্তার সংস্কারকাজ

চলছে রাস্তার সংস্কারকাজ। গতকাল কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামে।  প্রথম আলো
চলছে রাস্তার সংস্কারকাজ। গতকাল কালিয়া উপজেলার ফুলদাহ গ্রামে। প্রথম আলো

সড়কটির দূরত্ব ১ কিলোমিটার। মাঝখানে প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা। এই কাঁচা অংশের আগে ও পরে ইটের রাস্তা। কাঁচা অংশে অন্তত ৩০০ ফুট এলাকায় বড় গর্ত। অন্য অংশগুলোতে ছোট–বড় গর্ত। বৃষ্টি-বর্ষায় ওই ৩০০ ফুট এলাকায় ২-৩ ফুট পানি হয়। তখন যানবাহন চলে না; হেঁটে চলাচলও দুষ্কর। এ অবস্থায় গ্রামবাসীর স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে ওই রাস্তার সংস্কারকাজ।

রাস্তাটি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের ফুলদাহ গ্রামের। কালিয়া-নড়াইল সড়কের ফুলদাহ কালীতলা থেকে ফুলদাহ গ্রামের মধ্য দিয়ে রাস্তাটি আবার কালিয়া-নড়াইল সড়কে গিয়ে মিশেছে।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই ১ কিলোমিটার রাস্তায় যে অংশে ইট বিছানো, সেখানে অধিকাংশ ইট উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। ফুলদাহ কবরস্থান থেকে শহীদ শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার কাঁচা। ওই আধা কিলোমিটারে কবরস্থান থেকে আলী মোল্লার বাড়ি পর্যন্ত অন্তত ৩০০ ফুট এলাকা টানা বড় গর্ত। ওই গর্ত ভরাটের কাজ চলছে। সেখানে বালু দিয়ে তারপর মাটি দেওয়া হচ্ছে। শ্রমিকদের পাশাপাশি কিছু গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছেন। অন্য কাঁচা অংশে ছোট-বড় গর্ত।

গ্রামের লোকজন জানান, গ্রামের বাসিন্দা তৌফিকুল ইসলামের উদ্যোগে ও অর্থায়নে এক সপ্তাহ ধরে সংস্কারকাজ করা হচ্ছে। ফুলদাহ গ্রাম ছাড়াও লাঙ্গুলিয়া ও চাচুড়ি গ্রামের মানুষ এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। সড়কের এ অবস্থায় ওই তিন গ্রামের চার-পাঁচ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ফুলদাহ কবরস্থান ওই তিন গ্রামের মানুষের। ওই রাস্তা দিয়ে কবরস্থানে যেতে হয়। পাশেই ফুলদাহ-দাড়িয়াঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই রাস্তার দুরবস্থায় বর্ষায় ওই বিদ্যালয়ে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। গ্রামের ব্যবসায়ীরা মালামাল নেওয়ার জন্য ভ্যান বা অন্য যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন না।

গ্রামের কৃষিজীবী সলিম মোল্লা ও বক্কার শেখ বলেন, ওই রাস্তার পরে বিশাল ফসলি মাঠ। সেখান থেকে গরুর গাড়ি, ভ্যান বা অন্য যানবাহন ওই রাস্তা দিয়ে বর্ষা মৌসুমে একদম চলে না। হেঁটেও চলা যায় না। তাই কৃষকদেরও দুর্ভোগের শেষ নেই। ৩০ বছর আগে রাস্তাটি হলেও এদিকে নজর নেই কারোর।

তৌফিকুল ইসলাম একজন ওষুধ ব্যবসায়ী। চাচুড়ি বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গ্রামবাসীর দুর্ভোগে তিনি এগিয়ে এসেছেন। তাঁর নিজের অর্থে ও উদ্যোগে ওই ৩০০ ফুট এলাকায় চলছে সংস্কারকাজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাশের দাড়িয়াঘাটা গ্রামের রাজীব মোল্লা ও আমতলা গ্রামের জান্নাত শেখ এ সংস্কারকাজের জন্য আমাদের কিছু টাকা দিয়েছেন। যে অংশ সংস্কার করা হচ্ছে, সেখানে রোববার থেকে ইট বসানো হবে।’ তিনি বলেন, গ্রামের মানুষকে বাড়ি থেকে বের হতে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তা বর্ণনাতীত। এ কষ্ট দেখেই তিনি এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু পুরো রাস্তাটি পাকা করলেই দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটবে। এ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

স্থানীয় পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘নিজেদের উদ্যোগে রাস্তা সংস্কারের কথা শুনেছি। তবে নতুন বরাদ্দ পেলে রাস্তাটি ভালোভাবে সংস্কার করব বলে আশা রাখি।’

এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রাস্তাটি এলজিইডির আওতাভুক্ত হলে যেকোনো প্রকল্পে দিয়ে সংস্কার করা যাবে। আর তা না হলে আওতাভুক্ত করে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে সংস্কার করা সম্ভব হবে। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’