বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে খুলনার কৃষক

আষাঢ় মাস প্রায় শেষ হতে চললেও খুলনায় বৃষ্টির কোনো দেখা নেই। বৃষ্টি না থাকায় আমন ধান আবাদ শুরু করতে পারছেন না কৃষকেরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কিছুটা বৃষ্টি হলেও কৃষকেরা বলছেন, তা চাষাবাদের জন্য যথেষ্ট নয়।

খুলনা আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, আষাঢ় মাসের শুরু থেকে গতকাল শুক্রবার ২৮ আষাঢ় পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৫৭ মিলিমিটার। অন্য সময় আষাঢ় মাসে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, এবার তা তুলনামূলক অনেক কম। বেশ কয়েক দিন ধরে আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে থাকলেও শুক্রবার দুপুর থেকে কিছুটা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে বেলা তিনটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ১৭ মিলিমিটার। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল।

কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় আমন ধানের আবাদ শুরু করতে পারছেন না খুলনার কৃষকেরা। তাঁরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে। কৃষকেরা বলছেন, আমন ধানের চাষাবাদ পুরোটাই নির্ভর করে বৃষ্টির ওপর। সাধারণ কিছুটা বৃষ্টি হওয়ার পর মধ্য আষাঢ় থেকে বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শুরু করেন তাঁরা। কোনো কোনো জায়গায় অবশ্য আষাঢ়ের শুরু থেকেই বীজতলার কাজ শুরু হয়ে যায়। প্রায় এক মাস পর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে লাগানো হয়। ওই প্রক্রিয়াও চলে প্রায় এক মাস ধরে। তবে এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আষাঢ় মাস প্রায় শেষ হতে চললেও বৃষ্টির দেখা নেই। আর এ কারণে কৃষকেরা বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শুরু করতে পারছেন না। সময়মতো চাষ করতে না পারলে ফলনও ভালো না হওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

বটিয়াঘাটা উপজেলার কাতিয়ানাংড়া গ্রামের বর্গাচাষি ইছাবুর রহমান গোলদার বলেন, তিনি এবার ৩০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। তাঁর ওই এলাকায় বৃষ্টি হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। মাঠ পুরোটাই খাঁ খাঁ করছে। সময় পেরিয়ে গেলেও এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শুরু করবেন, তা বুঝতে পারছেন না। আর বীজতলা করতে না পারায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাঁর মতো ওই এলাকার অধিকাংশ কৃষক এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন বলে জানান তিনি।

একই উপজেলার ফুলতলার মেফতাহুল আলম বলেন, বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে বসে থাকতে থাকতে বেশ কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। এরপরও বৃষ্টি না হওয়ায় তাঁরা সেচযন্ত্র দিয়ে পানি তুলে বীজতলা প্রস্তুত করার কাজ শুরু করেছেন। সময়মতো বৃষ্টি না হলে আমন ধান চাষ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।

ডুমুরিয়া উপজেলার শাহপুর গ্রামের সমীরণ মণ্ডল বলেন, কয়েক দিন ধরে ঘন কালো মেঘ দেখে মনে হয়েছিল, এই বুঝি বৃষ্টি হবে। কিন্তু বৃষ্টি আর হচ্ছে না। যতটুকু বৃষ্টি হয়েছে, তা বীজতলা তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়। তাই তাঁরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন সেচযন্ত্র দিয়ে পানি তুলে বীজতলার কাজ শুরু করার। হয়তো দু-এক দিনের মধ্যেই সে কাজ শুরু হয়ে যাবে।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার বলেন, বৃষ্টি না হলে ধানে প্রভাব পড়বে। তবে আশা করা যায়, বৃষ্টি হবে ও কৃষকেরা তাঁদের চাষাবাদ শুরু করতে পারবেন।