ধীরে ধীরে জেগে উঠছে কুমার নদ

ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে ফরিদপুরের কুমার নদের খননকাজ। সম্প্রতি তোলা ছবি।  প্রথম আলো
ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলছে ফরিদপুরের কুমার নদের খননকাজ। সম্প্রতি তোলা ছবি। প্রথম আলো

প্রায় মৃত কুমার নদের জেগে ওঠার দিকে তাকিয়ে আছে ফরিদপুরের মানুষ। এখানকার মানুষের স্বপ্নপূরণে গত বছরের এপ্রিলে শুরু হয় এই নদের খননকাজ। শুরুতে ধীরে এগোলেও দ্বিতীয় বছরে বেড়েছে কাজের গতি। খননের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে জেগে উঠছে কুমার নদ। খননকাজ শেষ হলে জেলার কৃষি ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা স্থানীয় মানুষের।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, নদ খননের জন্য নেওয়া প্রকল্পটি নানা কারণে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হলেও ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে গত বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি। আনুষ্ঠনিকভাবে কাজ শুরু হয় গত বছরের এপ্রিলে। আগাম বর্ষার কারণে শুরুতেই কাজ ব্যাহত হয়। গত ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও হয়েছে ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়াতে আবেদন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কুমার নদ পদ্মার শাখানদী। ফরিদপুর সদর উপজেলার মদনখালী এলাকা থেকে গোপালগঞ্জের সেনদিয়া ঘাট পর্যন্ত এই নদ বিস্তৃত। এর দৈর্ঘ্য ১২১ কিলোমিটার। ফরিদপুর সদর, নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, মধুখালী ও ভাঙ্গা—জেলার ছয়টি উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এই নদ। এর দুই পারে গড়ে উঠেছে ফরিদপুর শহর।

কুমার নদ খননের কাজটি পেয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ড। তাদের নিয়োগ করা উপঠিকাদার হিসেবে কাজটি করছে বেঙ্গল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ফিউচার ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত ২৪ জুন জেলার মধুখালী উপজেলার বখশী চাঁদপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাতটি এক্সকাভেটর (খননযন্ত্র) দিয়ে নদ খননের কাজ চলছে। খননকাজে নিযুক্ত শ্রমিকেরা জানান, ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলে কাজ, মধ্যে এক ঘণ্টা খাবারের বিরতি থাকে।

বখশী চাঁদপুরের স্থানীয় বাসিন্দা কিয়াজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, খননের পর কুমার নদ জেগে উঠলে চাষের জন্য পানি পাওয়া যাবে, পাট জাগ (ভিজিয়ে রাখা) দিতে সুবিধা হবে, মাছ পাওয়া যাবে। খননের মধ্য দিয়ে পদ্মা নদীর সঙ্গে সংযোগ পুনঃস্থাপন করতে পারলে কুমার নদ পুরোনো যৌবন ফিরে পাবে।

বখশী চাঁদপুর এলাকায় নদীর পাড় ধরে কিছুদূর এগিয়ে বড়ঘাট বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের পানি স্বচ্ছ। এখানে খনন শেষ হয়েছে সম্প্রতি। খননের পর তোলা মাটি নদীর পাড়েই স্তূপ করে রাখা আছে। স্থানীয় গৃহবধূ জাহানারা বেগম বলেন, নদীতে পানি আসায় সবদিক দিয়েই ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টিতে নদীর মাটি আবার নদীতেই চলে যাচ্ছে। স্তূপ করা মাটি অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া দরকার।

>

খননকাজ শেষ হলে জেলার কৃষি ও অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে বলে আশা স্থানীয় মানুষের

গত ২৫ জুন সরেজমিনে ফরিদপুর শহরের কাছে লক্ষ্মীপুর, উত্তর আলীপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদের এই অংশের খননকাজ শেষ। এখানেও পাড়ে মাটির স্তূপ রয়েছে।

প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে কাজের গতি সন্তোষজনক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনাসহ দেড় বছর সময় বাড়াতে আবেদন করেছে। এ বিষয়ে এখনো মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

ফিউচার ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড বলছে, কাজ শেষ করতে ১৬ মাস সময় দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে ৪ মাস বর্ষা থাকে। মাত্র ১২ মাসে এমন একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। আরও দেড় বছর সময় লাগবে খননকাজ শেষ করতে। আর নদীর পাড়ের মাটি সরাতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম বছরে কিছুটা ব্যর্থতা ছিল কিন্তু সীমাবদ্ধতাও ছিল। মরা কুমারে কোনো পানি ছিল না, এখান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে।

পাউবো জানায়, প্রকল্পের আওতায় কুমার নদ খনন, এ নদের শাখা মরা কুমার নদ খনন ছাড়াও কয়েকটি খাল খননের কাজ হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ১০ কোটি ঘনমিটির পানির প্রবাহ নিশ্চিত হবে। এতে ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে সেচসুবিধা দিয়ে ৩৪ হাজার ১০৪ টন অতিরিক্ত ধান উৎপাদন করা যাবে। বন্যার প্রকোপ কমানো, শস্যহানি রোধ ও মানুষের ভোগান্তি কমবে। এ ছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় ৬১টি ঘাট করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। এ প্রকল্পের ব্যয় ২১৫ কোটি টাকা।

ফরিদপুরের সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি রমেন্দ্রনাথ রায় কর্মকার প্রথম আলোকে বলেন, ফরিদপুরবাসীর জলাধারের অভাব পূরণ করতে কুমার নদের বিকল্প নেই। নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজের গতি বাড়িয়ে খনন যত দ্রুত শেষ করা যাবে, ততই ভালো।

কাল পড়ুন: খামারের জন্য ঋণ পাচ্ছেন শুধু সরকারি দলের কর্মীরা