বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির শঙ্কা

খাগড়াছড়ির মেরুং-লংগদু সড়কের বড় মেরুং ছড়ার ওপর থাকা বেইলি সেতুটি ৬ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সড়কে নৌকা নিয়ে চলাচল করছেন। দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, ১৩ জুলাই। ছবি: পলাশ বড়ুয়া
খাগড়াছড়ির মেরুং-লংগদু সড়কের বড় মেরুং ছড়ার ওপর থাকা বেইলি সেতুটি ৬ দিন ধরে পানিতে তলিয়ে আছে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। এ অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সড়কে নৌকা নিয়ে চলাচল করছেন। দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি, ১৩ জুলাই। ছবি: পলাশ বড়ুয়া

উজান থেকে আসা পানির ঢল আর বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের নদ-নদীগুলো ফুঁসে উঠেছে। দ্রুত বাড়ছে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি। একইভাবে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এ সব অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তবে সারা দেশে বড় ধরনের বন্যার আপাতত আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আজ শনিবার সকালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের উত্তরা, উত্তর পূর্ব, দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন ভারতের সিকিম, পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল, আসাম, ও মেঘালয়ের ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য দেশের সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বৃষ্টির এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

এ ছাড়া ভারতের বিহার ও নেপালে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ কারণে আগামী তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টায় প্রধান নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যমুনা নদীর পানি সারিয়াকান্দি ও কাজিপুর পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। একই সময় চট্টগ্রাম, সিলেট ও রংপুর বিভাগে সুরমা, কুশিয়ারা, কংস, সোমেশ্বরী, ফেনী, হালদা, মাতামুহুরি, সাঙ্গু, ধরলাসহ প্রধান নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আজ সকাল নয়টার দিকে যমুনা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের ১৫টি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।

ভারী বর্ষণে প্লাবিত বান্দরবান বাসস্টেশন এলাকা। বাসস্টেশন, বান্দরবান, ১৩ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
ভারী বর্ষণে প্লাবিত বান্দরবান বাসস্টেশন এলাকা। বাসস্টেশন, বান্দরবান, ১৩ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে ২০ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তার পানি কমতে পারে।

বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, গঙ্গা, যমুনার পানি এক সঙ্গে বৃদ্ধি পেলে সাধারণত বাংলাদেশে বড় ধরনের বন্যা হয়ে থাকে। আপাতত তেমন পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা নেই। কারণ যমুনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এ সপ্তাহে কমার পর জুলাইয়ের ২৮ তারিখের পর রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়তে পারে।

রাজধানীর ঢাকা বা আশপাশের অঞ্চল বন্যার ঝুঁকিতে নেই মন্তব্য করে আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। এ কারণে ঢাকার পাশে শীতলক্ষ্যা, বালু নদীর পানি এ সপ্তাহে বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে আসতে পারে। হয়তো বিপৎসীমা অতিক্রমও করতে পারে। কিন্তু যমুনার পানি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় রাজধানী ঢাকা আপাতত বন্যার ঝুঁকিমুক্ত রয়েছে। অবশ্য সবকিছুই নির্ভর করছে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পূর্ব ভারতের বৃষ্টির পরিমাণের ওপর।