দ্বন্দ্বের জেরে জুয়েলকে হত্যা

মো. জুয়েল
মো. জুয়েল

রাজধানীর আদাবরে পাঠাও চালক জুয়েল হত্যায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে আদাবর থানা-পুলিশ।

জুয়েল হত্যায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আজ শনিবার ঢাকার আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত প্রত্যেক আসামিকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

তিন আসামি হলেন, ভোলার বোরহান উদ্দিন থানার ছোটপাতা গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে লিটন (২৮), পটুয়াখালীর কেউয়া বুনিয়া গ্রামের মজিবর ভান্ডারির ছেলে জাকির হোসেন (৩০) ও মাদারীপুরের বাহেরচর কাতলা গ্রামের শাহজাহানের ছেলে সাইদুর (২০)।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আদাবরের লোহার সেতুর গোড়ায় পাঠাও চালক জুয়েলকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে জুয়েলকে মিরপুর ডেন্টাল হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের স্ত্রী আরজীনা খাতুন বাদী হয়ে আদাবর থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
নিহত জুয়েলের গ্রামের বাড়ি ভোলার বালিয়া গ্রামে।

আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুর রহমান শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ববিরোধের জের ধরে জুয়েলকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তাঁদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

মামলার এজাহারে জুয়েলের স্ত্রী আরজীনা বলেন, তাঁর স্বামী জুয়েল পাঠাও অ্যাপস ব্যবহার করে মোটরসাইকেল চালায়। বৃহস্পতিবার সকালে মোটরসাইকেল নিয়ে বাসা থেকে তিনি বের হয়ে যান। রাত ১০টার দিকে জুয়েল তাঁকে (আরজিনা) ফোন দিয়ে জানান, তিনি আছেন আদাবরের লোহার সেতুর ওপরে। তাঁকে (জুয়েল) মারার জন্য ওই এলাকার মিজান, মনির, খোকন খুঁজছে। এর ঠিক এক ঘণ্টা পর বাদীর বোন আফরোজা জুয়েলের স্ত্রীকে ফোন দেন। জানান, জুয়েলকে কুপিয়ে বালুর মাঠে ফেলে রেখে গেছে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেছে।

জুয়েলের স্ত্রী আরজীনা খাতুন আরও বলেন, রাত ২টার দিকে তিনি ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে জুয়েলের সঙ্গে কথা বলেন। জুয়েল তাঁকে জানায়, আদাবরের লোহার সেতুর কাছে জুয়েলকে দেখতে পেয়ে আসামিরা চাপাতি দিয়ে কোপাতে থাকে। জুয়েল বাঁচার জন্য খালে ঝাঁপ দেয়। তারপরও আসামিরা জুয়েলকে খাল থেকে তুলে এনে স্থানীয় শিল্পীর বাড়ির দক্ষিণ পাশের খালপাড়ে পুনরায় মারতে থাকে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, জুয়েল হত্যায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে জুয়েলের স্ত্রী বাদী হয়ে গত ২৬ মার্চ আদাবর থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

আদাবর থানার পুলিশ পরিদর্শক শাহীনুর রহমান বলেন, জুয়েল খুনের পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, জুয়েল হত্যায় জড়িতদের আদাবরে আলাদা গ্যাং আছে। তাঁরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জুয়েলের সঙ্গে আসামিদের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে জুয়েলকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

জুয়েল হত্যা মামলার এজাহারে নাম থাকা আসামিরা হলেন, আদাবরের সালাউদ্দিন (৩০), মিজান (৩৫), খোকন (৩৫), মনির (৩০), সাহিদা আক্তার (৩৫), হাফিজ উদ্দিন (৩৫), মারুফ (১৮), সুজন (৩০), নেয়ামত (৪০), সাদমান (২৫), কাউসার (২৭), রুবেল (২৬), লিটন (৩৫), জাকির (৩৫), স্বপন (৩০), শাহ আলম (২১), রাজু (২৫), মিজু (৩৫) ও মরিয়ম (৪০)।
তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার এস আই রফিকুল ইসলাম বলেন, পাঠাও চালক জুয়েল হত্যায় জড়িত পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।