সুনামগঞ্জে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকার মূল সড়ক উপচে সুরমা নদীর পানি ঢুকছে লোকালয়ে। আজ শনিবার বেলা তিনটায় তোলা ছবি। ছবি: খলিল রহমান
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকার মূল সড়ক উপচে সুরমা নদীর পানি ঢুকছে লোকালয়ে। আজ শনিবার বেলা তিনটায় তোলা ছবি। ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। আজ শনিবার জেলার নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। এতে করে কিছু কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। জেলায় থেমে থেমে দিনভর বৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়া এবং যাতায়াতের অসুবিধার কারণে সুনামগঞ্জের তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ আছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে আজ বেলা তিনটায় সুরমা নদীর পানি ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল নয়টা থেকে আজ সকাল নয়টা পর্যন্ত জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সড়ক থেকে পানি না নামা এবং সড়কের বিভিন্ন স্থান ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন আছে। এই সড়কের বিশ্বম্ভরপুর থেকে তাহিরপুর উপজেলা পর্যন্ত কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। তবে সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ-জামালগঞ্জ, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি থাকলেও যানবাহন চলাচল করছে। এসব এলাকায় বন্যার পানিতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর ও সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কের কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর এলাকার মূল সড়কে কিছু অংশ শুক্রবার বিকেলে সুরমা নদী পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। নবীনগর এলাকার মূল সড়ক উপচে আজ লোকালয়ে নদীর পানি ঢুকেছে। এ ছাড়া পৌর শহরের বড়পাড়া, নবীনগর, উকিলপাড়া, ওয়েজখালি, ফিরোজপুর, মল্লিকপুর, তেঘরিয়া এলাকায় সুরমা নদীর পানি আছে। এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢোকায় মানুষজন ভোগান্তিতে আছেন।

বন্যায় ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। এ ছাড়া ছাতক পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও বন্যার পানি রয়েছে। জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাক, বেহেলী ও সদর ইউনিয়নের মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন বেশি। ফেনারবাক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত রায় জানিয়েছেন, তাঁর ইউনিয়নের পুরোটাই হাওর এলাকা। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে বেশি। বৃষ্টি ও হাওরের প্রবল ঢেউয়ের কারণে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যাতায়াত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আর যাদের ঘরে পানি ঢুকেছে, তারা আছেন সীমাহীন দুর্ভোগে।

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় গতকাল রাতে পানি কিছুটা কমলেও আজ সকালে বৃষ্টি হওয়ায় আবার পানি বাড়তে থাকে। সকালেও উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ, থানার সামনের সড়ক, উপজেলা মডেল উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বন্যার পানি দেখা গেছে। উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন কুমার বর্মণ বলেন, বৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল যদি না থামে তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। বৃষ্টি হলেই পানি বাড়ে। এই উপজেলার বেশির ভাগ স্কুল-কলেজই প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ আছে।

তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরোয়ার বলেন, এই উপজেলায় ১৩৪টি প্রাথমিক এবং ১৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে। এর বেশির ভাগই প্লাবিত হয়েছে। আর যেগুলোতে পানি ঢোকেনি, সেগুলোতে এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার জন্যই যাতায়াত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ে গেলেও শিক্ষার্থীরা না আসায় পাঠদান হয়নি।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, তাঁর উপজেলায় লোকজন বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পানিবন্দী মানুষজনও বেশি। পাহাড়ি ঢলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলার সড়ক যোগাযোগ ভেঙে পড়েছে। তাই তাহিরপুরে ত্রাণসহায়তা বেশি দিতে হবে। এখন পর্যন্ত খুবই সামান্য সহায়তা পাওয়া গেছে। আরও ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, এই উপজেলার সব কটি ইউনিয়নই কম–বেশি বন্যাকবলিত। এর মধ্যে গৌরারং, মোহনপুর, সুরমা ও রঙ্গারচর ইউনিয়নের বন্যায় আক্রান্ত মানুষ বেশি। আজ পর্যন্ত সদর উপজেলায় ১৮ মেট্রিক টন চাল, ৭০০ শুকনো খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য আজ আরও ৩০০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকা ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর আগে ৩০০ মেট্রিক টন চাল, আড়াই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এগুলোর বিতরণ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি সবাই বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আছেন। প্রতিটি এলাকায় সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা হচ্ছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৫টিতে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি নয়। সবাই মিলেই এই পরিস্থিতি মোবাকিলা করা হবে।