মামলা হচ্ছে পিডিবির সেই ২ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে

মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. আলাউদ্দিন মিয়া
মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. আলাউদ্দিন মিয়া

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) দুজন সিবিএ (কালেকটিভ বার্গেনিং এজেন্ট) নেতার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ রোববার কমিশন এ মামলার অনুমোদন দেয় বলে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।

সিবিএর এই দুই নেতা হলেন সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন মিয়া। জহিরুল ইসলাম চৌধুরী সংস্থাটির সহকারী হিসাব রক্ষক (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত) এবং মো. আলাউদ্দিন মিয়া (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) সংস্থাটির সাবেক স্টেনোটাইপিস্ট কাম কম্পিউটার অপারেটর।

দুদক সূত্র জানায়, সিলেট মেট্রো-ঘ-০২-০০৩৩ নম্বরের সরকারি পাজেরো গাড়িটি ব্যবহার করে আসছিলেন সিবিএ সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি ২০১৮ সালের ৬ জুন অবসরে গেছেন। সে সময় তিনি পিডিবির অডিট পরিদপ্তরের সহকারী হিসাবরক্ষক ছিলেন। শ্রম বিধিমালা ২০১৫-এর ২০২ ধারা অনুসারে শ্রমিক সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মী সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে যানবাহন সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না। তারপরও প্রভাব খাটিয়ে ১০ বছর ধরে গাড়িটি তিনি ব্যবহার করে আসছিলেন। এর চালকের বেতন, তেল ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বহন করছে পিডিবি।

ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-২৮২৭ নম্বরের পাজেরো গাড়িটি ব্যবহারের এখতিয়ার যুগ্ম সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের। অথচ ১০ বছর ধরে এটি ব্যবহার করছিলেন তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী মো. আলাউদ্দিন। সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য জ্বালানি, রক্ষণাবেক্ষণ, চালকের বেতনসহ সব খরচ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানই। এক বছর আগে অবসরে যাওয়ার পরও গাড়িটি ছিল তাঁর দখলে। এ বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর দখল থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে দুদক। তার পরদিন জহিরুল ইসলাম চৌধুরীর দখলে থাকা অন্য গাড়িটিও উদ্ধার করা হয়

গাড়ি দুটি উদ্ধারের পর, দুদক থেকে জানানো হয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে যাবে সংস্থাটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে সংস্থাটি। অনুসন্ধান করেন দুদকের সহকারী পরিচালক খলিলুর রহমান সিকদার। তাঁর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে মামলার অনুমোদন দেয় দুদক। দু’একদিনের মধ্যেই এ ঘটনায় মামলা হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাড়ি দুটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাজের স্বার্থে জরুরি প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য ‘স্ট্যান্ডবাই’ (ভিআইপি) হিসেবে রাখার দপ্তরাদেশ দেওয়া হয়। বোর্ডের কাজের স্বার্থে জরুরি প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জন্য ‘স্ট্যান্ডবাই’ (ভিআইপি) হিসেবে রাখার দপ্তরাদেশ থাকলেও নিজেদের ভিআইপি দাবি করে জহিরুল ইসলাম চৌধুরী এবং মো. আলাউদ্দিন ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজদের দখলে রাখেন। তাঁরা গাড়ি দুটি ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করেন। ২০১০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গাড়ি ব্যবহার করে জ্বালানি, মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ সরকারি এক কোটি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার ২৭ টাকা ক্ষতিসাধনপূর্বক আত্মসাৎ করার বিষয়টি অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের গাড়ি ব্যবহারের নীতিমালায় প্রাধিকারপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে গাড়ি প্রদান করা যাবে না মর্মে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাদের নামে পাজেরো গাড়ি দুটি সরাসরি বরাদ্দ সংক্রান্ত কোনো পত্র পাওয়া যায়নি। শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তারা প্রভাব খাটিয়ে গাড়ি দুটি ব্যবহার শুরু করেন এবং প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত গাড়ি দুটি ব্যবহার করেন। ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট আলাউদ্দিন মিয়া এবং ২০১৮ সালের ৬ জুন জহিরুল ইসলাম চৌধুরী চাকরি থেকে অবসরে গেলও গাড়ি দুটি পরিবহন পুলে জমা দেননি।

সিবিএর এই দুই নেতার সম্পদের অনুসন্ধানও করছে দুদক। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অনেক দিন ধরে সিবিএর নেতৃত্বে থেকে বোর্ড প্রশাসনের ওপর খবরদারি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা পড়বে বলে জানিয়েছে দুদক।