আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া-আসায় দিন কাটছে তাদের

সকালে বৃষ্টি শুরু হলে রাঙামাটি শহরের রূপনগর এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রোববার, ১৪ জুলাই। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
সকালে বৃষ্টি শুরু হলে রাঙামাটি শহরের রূপনগর এলাকার বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। রোববার, ১৪ জুলাই। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

পাহাড়ধসের ভয়ে ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে না। আবার আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে ঘরে থাকা সম্পদ চুরির ভয়। অনেক দিন ধরে এ সংকটে দিন কাটছে রাঙামাটির অনেক মানুষের। এমন একজন নাসিমা বেগম। রাঙামাটির শহরের রূপনগর এলাকার বাসিন্দা তিনি। এখন শহরের বাংলাদেশ টেলিভিশন (টিভি কেন্দ্রে) কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে নাসিমাদের পরিবার। পরিবারে কেউ কেউ বাড়িতে থাকছে, আবার কেউ থাকছে কেন্দ্রে। নাসিমা বলছিলেন, ‘ভারী বৃষ্টি শুরু হলে আবার পরিবারের সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যায়। এ সময় শিশু, বৃদ্ধ ও অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বেশি ভোগান্তির শিকার হন। ’

টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা বাড়িঘর-আশ্রয়কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার মধ্যে রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা আসা-যাওয়ার মধ্যে আছে। এতে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তবে অনেকে বাড়িঘরের সম্পদ চুরির আশঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও বাড়িঘর ছাড়ছে না।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে আশ্রয়কেন্দ্র-ঘর, এভাবে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। পরিবারের কিছু সদস্য ঘরে আর কিছু সদস্য আশ্রয়কেন্দ্রে করে থাকছে। এ ছাড়া বৃষ্টি থামলে বাড়িতে আর ভারী বৃষ্টি হলে আশ্রয়কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ৬ জুলাই থেকে রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে রাঙামাটি শহর, বিভিন্ন সড়ক ও উপজেলায় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। ৯ জুলাই দুপুর থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আসতে শুরু করে। শুরুতে ১২০ পরিবারের পাঁচ শতাধিক সদস্য আশ্রয়কেন্দ্রে আসে। গত বৃহস্পতিবার ভারী বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় দুই হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসে। তবে শুক্রবার বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বেশি কিছু মানুষ বাড়িঘরে চলে যায়। আজ রোববার দুপুরে ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৭০ পরিবারে ৯৫৯ জন সদস্যকে পাওয়া গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা লোকজনকে দুই বেলা খাবার ও এক বেলা নাশতা দেওয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন জানায়, রাঙামাটি শহরের রূপনগর, শিমুলতলি, নতুনপাড়া, পশ্চিম মুসলিমপাড়া এলাকায় অন্তত ১০ হাজারের বেশি মানুষ অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া শহরের তবলছড়ি, রিজার্ভ বাজার, আসামবস্তি কলেজ গেটসহ বেশ কিছু এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। ২০১৭ সালে এসব স্থানে বেশি পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এ কারণে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকে নিরাপদ স্থান ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া প্রচার করা হচ্ছে। এসব এলাকায় জেলা প্রশাসন প্রাথমিকভাবে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত রেখেছে।

রাঙামাটির পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রবি মোহন চাকমা বলেন, আমার ওয়ার্ডে চারটি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এতে তিন শতাধিক মানুষ রয়েছে। তাদের সকালে নাশতা ও দুই বেলা খাবার দেওয়া হচ্ছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুপুরের তথ্যে ১১টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় এক হাজার মানুষ রয়েছে। তবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় মধ্যে মানুষের সংখ্যা বাড়ে-কমে। আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের জেলা প্রশাসন থেকে দুই বেলা খাবার ও পৌরসভা থেকে সকালে নাশতা দেওয়া হচ্ছে। যত দিন বৃষ্টি হবে, তত দিন আশ্রয়কেন্দ্র খোলা রাখা হবে। জেলা প্রশাসন থেকে সব সময় সতর্ক দেওয়া হচ্ছে যেন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অবস্থান না করা হয়।

গত শনিবার কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নে কারিগরপাড়া এলাকায় পাহাড়ধসে দুজন ও ৮ জুলাই কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের কলাবাগান এলাকায় দুজন মারা যান। গত বছর রাঙামাটির নানিয়ারচরে ১১ জন ও ২০১৭ সালে রাঙামাটি শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ১২০ জন মানুষ মারা যান।

সড়ক ঝুঁকিপূর্ণ
রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে সাপছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়ি এলাকায় সড়ক ধসে সাড়ে সাত ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এখনো ভারী যান চলাচলের উপযোগী করা যায়নি। এদিকে গতকাল বেলা ১১টার দিকে রাঙামাটি-কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কে যান চলাচল চালু করা হয়েছে। গত শনিবার এই সড়কে মতিপাড়া ও কারিগরপাড়ার কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধস হওয়ায় সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

আজ দুপুরে রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের মানিকছড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের অধিকাংশ অংশ ধসে পড়েছে। ধসে পড়া দুপাশে শতাধিক গাড়ি আটকা পড়েছে। যাত্রীরা হেঁটে ধসে পড়া স্থান পারাপার হচ্ছেন।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাঙামাটি-কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী দীপন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বেলা ১১টার দিকে সড়ক থেকে ধসে পড়া সব মাটি সরানো হয়েছে। এরপরপর যানচলাচল শুরু হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কাপ্তাই-বান্দরবান সড়কে লিচুবাগান এলাকা কর্ণফুলী নদীর ফেরি চলাচল চালু করা হয়েছে।
রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মূছা প্রথম আলোকে বলেন, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কের রাঙামাটি শহর থেকে ১১ কিলোমিটার অংশে ধসে যাওয়া সড়ক সংস্কার করতে ৮টার থেকে সাড়ে ৩টার পর্যন্ত সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকেলে হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।