রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সিউলের সহায়তা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকা, ১৪ জুলাই। ছবি: বাসস
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ঢাকা, ১৪ জুলাই। ছবি: বাসস

আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটের আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য মিয়ানমারকে রাজি করাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সহায়তা কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়নের প্রতি এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ও কোরিয়ার পক্ষে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়ন নেতৃত্ব দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর কারণে এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করব রোহিঙ্গা সংকটের একটি আশু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে।’ জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা তা করব।’

রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া সব বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রেস সচিব বলেন, ৪০ মিনিট স্থায়ী এ বৈঠকে আলোচনায় প্রধানত ব্যবসা–বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কারিগরি সহযোগিতার বিষয় উঠে আসে।

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মানবিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে আমাদের দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টার সম্পূরক হিসেবে অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপ ও সম্পৃক্ততা দরকার।’ শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার রাখাইন প্রদেশে একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে তাদের ভূমি ও সম্পত্তিতে প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে উৎসাহিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের নভেম্বরে ইউএনজিএতে মিয়ানমারে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তাব গ্রহণে সমর্থন দেওয়ার জন্য কোরীয় প্রজাতন্ত্রের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য কোরিয়ার পক্ষে খুব বেশি ঝুঁকে আছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই বাণিজ্যবৈষম্য কমাতে আমরা আপনাকে দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে কোনো ব্যতিক্রম ছাড়া সব বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার অনুরোধ জানাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশ থেকে ওভেন গামেন্টস, ওষুধ, নিটওয়্যার, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ফ্রোজেন ফুড ও সিরামিক সামগ্রী আমদানি করতে পারে।

জবাবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক জানান, দক্ষিণ কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়ার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন।

প্রেস সচিব বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে বলে বাংলাদেশকে ‘সম্ভাবনাময় দেশ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। লি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) হিসাবে বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করেছে।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোতে টেক্সটাইল, ট্যানারি ও পাদুকা কারখানাসমূহে কোরিয়ার যথেষ্ট বিনিয়োগ রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা স্মরণ করি যে, ১৯৯৬-২০০১ সালে আমার প্রথম মেয়াদে কোরিয়ান কোম্পানিগুলো প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে বিনিয়োগ করেছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া এখানে জিটুজি এবং পিপিপি মডেলের অধীনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’-এ বিনিয়োগ করতে পারে। ওটা বিনিয়োগকারীদের জন্য সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ কেন্দ্র। তিনি বলেন, কোরিয়া ১.৬১৯ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জিডিপি নিয়ে বিশ্বের ১২তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। তিনি আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য কোরিয়ার আগ্রহকে স্বাগত জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোরিয়া স্বাস্থ্য, আইসিটি, শিক্ষা, পানি বিশুদ্ধকরণ, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগিতাসহ বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের অংশীদারদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (কোইকা) আমাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণ খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

শেখ হাসিনা ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম (আইটিএস)-এর জাতীয় মহাসড়কে করিডরগুলোর নির্ভরযোগ্যতা ও নিরাপত্তার উন্নতির জন্য কোরিয়ান তহবিলের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কোইকার সহযোগিতা প্রশংসনীয়।

মহেশখালী দ্বীপে টেলিকমের ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের জন্য কোরিয়া শীর্ষ সহযোগিতাকারী দেশ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন হাইটেক পার্কগুলোতেও আরও কোরিয়ান বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই।’

ই-বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্ল্যান্ট স্থাপন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা প্রবর্তন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কোরিয়ার সহযোগিতা চেয়েছেন শেখ হাসিনা। জবাবে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা জ্বালানি, আইসিটি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।