ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে আশুলিয়া থানার কার্যক্রম

>

আশুলিয়া থানার ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির তিনতলায় রয়েছে কনস্টেবলদের ব্যারাক।  প্রথম আলো
আশুলিয়া থানার ভবন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটির তিনতলায় রয়েছে কনস্টেবলদের ব্যারাক। প্রথম আলো

নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পাশে বাইপাইল এলাকায় যে তিনতলা বাড়িটিতে থানার কার্যক্রম চলছে, তা মূলত একতলা একটি ভবন ছিল।

ঢাকার আশুলিয়া থানার কার্যক্রম চলছে ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনে। যেকোনো সময় ভবনটি ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাভার থানাকে ভাগ করে ২০০৫ সালে পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠন করা হয় আশুলিয়া থানা। এরপর থেকে একটি ভাড়াবাড়িতে থানার কার্যক্রম চলে আসছে।

নবীনগর-চন্দ্রা সড়কের পাশে বাইপাইল এলাকায় যে বাড়িটিতে থানার কার্যক্রম চলছে, তা মূলত একতলা একটি ভবন ছিল। পিলার ছাড়া নির্মিত ওই ভবনে পরবর্তী সময়ে দোতলা করা হয়। দোতলার ওপর টিনের চালা দিয়ে নির্মাণ করা হয় কনস্টেবলদের ব্যারাক। বর্তমানে থানাটিতে ৪ জন পরিদর্শক, ২১ জন এসআই, ২০ জন এএসআই ও ৮০ জন কনস্টেবল কর্মরত।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনে ঢুকতেই নিচতলার ডান পাশের ছোট একটি কক্ষে বসেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। এর পরের কক্ষটি ব্যবহার করা হয় হাজতখানা হিসেবে, যেখানে আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা নেই। হাজতখানার সঙ্গে একটি কক্ষের এক পাশে বসেন কম্পিউটার অপারেটর, অপর পাশে বসে মাসিক প্রতিবেদন তৈরি করেন, এমন এক কর্মকর্তা। পেছনের দিকের সরু একটি কক্ষে বসেন পরিদর্শক (তদন্ত)। সামনের দিকে ছোট একটি কক্ষে চলে থানার দাপ্তরিক কার্যক্রম। ভবনের বাইরে ছোট দুটি কক্ষে বসেন পরিদর্শক (অপারেশন) ও পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স)। থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) ও ওয়্যারলেস অপারেটরের জন্য রয়েছে ভবনসংলগ্ন একটি ছাপরাঘর। ভবনটির দোতলার একটি কক্ষে থাকেন ওসি। অপর একটি কক্ষে থাকেন তিন কর্মকর্তা। পাশের একটি কক্ষে থাকেন কয়েকজন কনস্টেবল। তৃতীয়তলায় ব্যারাকে ৪০টির মতো বিছানা রয়েছে। যেখানে গাদাগাদি করে থাকেন অর্ধশতাধিক কনস্টেবল। মালখানা ও অস্ত্রাগারের অবস্থা খুবই নাজুক। সেবা নিতে আসা জনসাধারণের জন্য শৌচাগারের কোনো ব্যবস্থা নেই।

এসআই সাজ্জাদুর রহমানসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, থানা ভবনের ভেতরে তাঁদের বসার ব্যবস্থা নেই। তাই মামলাসংক্রান্ত দাপ্তরিক কাজের জন্য নিরুপায় হয়ে অনেকে থানার আশপাশে কক্ষ ভাড়া নিয়ে অথবা বাসায় বসে কাজ সারেন। সেবা নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টে বসে। এতে সেবাগ্রহীতা ও তাঁদের (এসআই ও এএসআই) বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।

সেবা নিতে আসা কয়েকজন বলেন, থানায় তাঁদের বসার কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই শৌচাগারের ব্যবস্থা। ঝড়-বৃষ্টির সময় তাঁদের আশ্রয় নিতে হয় আশপাশের হোটেল ও দোকানে। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ি নিয়ে এসে বিপাকে পড়েন অনেকেই।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিজাউল হক বলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সম্প্রতি ভবনটি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে থানার কার্যক্রম ও ব্যারাক অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ভবনের মালিকও তাঁর ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এরপরও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থানার কার্যক্রম চালানোর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে। সুবিধামতো ভবন পাওয়া গেলে থানা সরিয়ে নেওয়া হবে।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাঈদুর রহমান বলেন, আশুলিয়া থানার জন্য আশুলিয়া বাজারের কাছে মরাগাং এলাকায় জায়গা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অর্থ বরাদ্দ ও অনুমোদন পেলে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।