খুলনার পানখালী ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ সাত দিন

>

সরাসরি অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করতে না পারায় ওই অঞ্চলের রোগী ও স্বজনদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

খুলনা সদরের সঙ্গে দাকোপ উপজেলার একমাত্র সরাসরি সড়ক যোগাযোগ সাত দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঝপঝপিয়া নদীর ওপর বরনপাড়া-পানখালী ফেরিঘাটের ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় ওই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন দাকোপের বাসিন্দা ও খুলনা-চালনা সড়কে যাতায়াতকারীরা। 

সরাসরি অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াত করতে না পারায় ওই অঞ্চলের রোগী ও স্বজনদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, জেলা শহর খুলনার সঙ্গে উপকূলীয় দাকোপের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র সংযোগস্থল পানখালী ইউনিয়নের ঝপঝপিয়া নদীর ওপরের ফেরিঘাট। ফেরির দুই পাড়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন। নিয়মিত বিরতিতে যাত্রী পারাপার করছে দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। সাধারণ যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে সেই নৌকায় নদী পার হচ্ছেন। পার করছেন মোটরসাইকেল। ফেরিঘাটের এক পাশে কাঠের পাটাতনের ওপর দিয়ে টাকার বিনিময়ে মোটরসাইকেল নৌকায় তুলে দিচ্ছে কয়েকজন মানুষের একটি দল। ভাটার সময় দুর্ভোগ ব্যাপক আকার ধারণ করছে। 

মোটরসাইকেল পারাপারে সহায়তাকারী দলের একজন মো. ইসমাইল বলেন, প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল তাঁরা পার করছেন। ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের সহায়তা দিচ্ছেন। প্রতি মোটরসাইকেল নৌকায় তুলে দেওয়ার জন্য তাঁরা ১০ টাকা করে নিচ্ছেন। 

বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা এলাকার ত্রিবেনী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিদিন বাড়ি থেকে চাকরির সুবাদে দাকোপের পানখালী যাতায়াত করি। যাওয়া ও আসার সময় ফেরিঘাটে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হয়। নদী পার হয়ে আবার অন্য কিছু ধরতে হয়। ফেরি বন্ধ থাকায় নৌকায় চাপ বেশি থাকছে। প্রচুরসংখ্যক মোটরসাইকেল পার হচ্ছে। পন্টুন না থাকায় অন্য জায়গায় নৌকা ধরায় দুর্ভোগ হচ্ছে। দুর্বল পন্টুন ও বেইলির সেতুর ওপর দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারভর্তি বড় বড় ট্রাক চলাচল করায় ঘাট দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

চালনা পৌরসভার বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীতে অনেক স্রোত। এ সময় অধিক যাত্রী নিয়ে ঝুঁকির মধ্য দিয়ে ট্রলারে পার হতে হচ্ছে। কর্তাব্যক্তিদের এ বিষয়ে কোনো নজর নেই। কবে ঠিক হবে, তা–ও কেউ ঠিকভাবে বলতে পারেন না। 

ঘাটের ইজারাদারের প্রতিনিধি ব্রজেন রায় বলেন, ‘ফেরিঘাটের পানখালী পাড়ের পন্টুন থেকে ঘাটে ওঠার বেইলি সেতু নষ্ট হওয়ার পর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। মেরামতের কাছ চলছে। এ ছাড়া বরনপাড়া পাড়ের পন্টুন ফুটো হয়ে মাস দুয়েক ধরে তাতে পানি ঢুকছিল। সেচে ওই পানি ফেলে দেওয়া হতো। ওই পন্টুনও পরিবর্তন করা হচ্ছে। বুঝতে পারছি মানুষের অনেক ভোগান্তি হচ্ছে।’ 

খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল আদ্-দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বিনা মূল্যে প্রসূতি ও জরুরি রোগীদের আনা-নেওয়া করে। ওই অ্যাম্বুলেন্সের চালক জয়ন্ত বৈরাগী বলেন, প্রতিদিন দু-একজন রোগীকে তাঁরা খুলনায় আনেন। তবে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় তাঁরা রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। 

দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক নিজামী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক সময় রোগীদের অবস্থা বুঝে উন্নত চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে জেলা শহর খুলনায় পাঠাতে হয়। সেতুর অভাবে ফেরিঘাটে নানা বিড়ম্বনা থাকে। তারপরও সপ্তাহখানেক ফেরি বিকল থাকার কারণে আমাদের অ্যাম্বুলেন্স সরাসরি খুলনা পর্যন্ত যেতে পারছে না। ফেরিঘাট পর্যন্ত যাচ্ছে। এরপর রোগীর স্বজনেরা রোগী নিয়ে নৌকায় পার করে বিভিন্ন উপায়ে খুলনায় যাচ্ছে। রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা অসহনীয় দুরবস্থার শিকার হচ্ছেন।’ 

সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ খুলনার উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফেরিঘাটের দুই পাড়েই সংস্কার দরকার ছিল। ৮ জুলাই মেরামতকাজ শুরু হলে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংস্কারজনিত কারণে জনসাধারণের সাময়িক ভোগান্তি হচ্ছে। ১৫ জুলাই
রাত থেকে ফেরি চলাচল চালু করতে পারব বলে আশা করছি।’