বন্যার পানিতে চার শিশুর মৃত্যু, কুড়িগ্রামে পরিস্থিতির অবনতি

কুড়িগ্রামের বন্যার একটি দৃশ্য। চর ভগবতিপুর, ১৫ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
কুড়িগ্রামের বন্যার একটি দৃশ্য। চর ভগবতিপুর, ১৫ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি ঘটেছে। বন্যার পানিতে ডুবে গতকাল রোববার ও আজ সোমবার অন্তত চার শিশু মারা গেছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ১১২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র চিলমারী পয়েন্টে ১০৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে কুড়িগ্রাম-ভূরুঙ্গামারী মহাসড়কের ওপর দিয়ে চারটি স্থানে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থলবন্দরের যোগাযোগব্যবস্থা। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ যাত্রাপুর হাটের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে এখন যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা ও কলাগাছের ভেলা। কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় অনেক পানিবন্দী মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না।

জেলার সিভিল সার্জন আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, এই দুই দিনে বন্যার পানিতে ডুবে অন্তত চার শিশু মারা গেছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। এর মধ্যে উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের হাবিবুল্লাহ (৬), ফুলবাড়ীতে একজন ও চিলমারী উপজেলায় দুই শিশু রয়েছে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় অপর তিন শিশুর নাম তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেননি।

এদিকে জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম জানায় কুড়িগ্রামে ৩টি পৌরসভাসহ ৭৬টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৫টি ইউনিয়নের ৩৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ৭৩ হাজার ৫১১টি পরিবারের ২ লাখ ৯৪ হাজার ৪৪ জন মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। বন্যায় ২৭৫ প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ২২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৬টি ব্রিজ-কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ৯০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ৫২২ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নাগেশ্বরীর উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মুড়িয়া এলাকায় দুধকুমার নদ তীররক্ষা বাঁধের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। এ ছাড়া হুমকিতে রয়েছে সদর উপজেলার বাংটুর ঘাট ও সারডোব তীররক্ষা বাঁধ। এখানে চর বড়লই বাংলাবাজার এলাকায় পাকা সড়ক ভাঙনের উপক্রম হয়েছে। নাগেশ্বরী-কুড়িগ্রাম মহাসড়কের পাটেশ্বরী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, উত্তর কুমরপুর মোড় ও চণ্ডিপুর এলাকায় ধরলা নদীর পানি সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে রাস্তা রক্ষায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এই ব্যবস্থার কথা সাংবাদিকদের জানান।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, সোমবার বিকেল পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ১১২, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০৮ ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে তিস্তার পানি কমে গিয়ে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সমন্বিতভাবে মোকাবিলার জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ারের উপস্থিতিতে এক বিশেষ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সব বিভাগকে সক্রিয় থেকে বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সচিব প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা জানান। সোমবার জেলার ৩টি বন্যাদুর্গত এলাকায় সচিব দুই হাজার পরিবারের প্রত্যককে ১৫ কেজি করে চাল দেন।