শ্রেণিকক্ষে বুকপানি, ৬১ বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ

চারদিকে থই থই পানি। বুকপানিতে তলিয়ে গেছে বিদ্যালয় ভবন, মাঠে বইছে স্রোত। শ্রেণিকক্ষও পানিতে টইটম্বুর। যমুনার ঢলে শ্রেণিকক্ষ প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক দিন আগেই। এমন অবস্থা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কাশিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।

বন্যার ঢলে শ্রেণিকক্ষ তলিয়ে যাওয়ায় সোমবার পর্যন্ত বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আর সব মিলে জেলার ৬১টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে।

সোমবার যমুনার দুর্গম চর হাটবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে বুকপানিতে তালিয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখা যায়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী শতাধিক। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব বলে, ‘শ্রেণিকক্ষে বুকপানি। নৌকা ছাড়া বিদ্যালয়ে যাওয়া যায় না। স্যাররাও আসতে পারেন না।’

শিমুলতাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ হাঁটুপানিতে নিমজ্জিত। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেখা মিললেও নেই কোনো শিক্ষার্থী। সহকারী শিক্ষক নিলুধা আকতার বলেন, চারদিকে থই থই পানি। শিশুরা আসতে পারে না। এ জন্য পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

ভাঙ্গুরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন তিন দিন আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিদ্যালয় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে পাশের চরে। প্রধান শিক্ষক শাহিনা আকতার রোববার প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার মতো পরিস্থিতি নেই।

বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফজলু আকন্দ বলেন, ১৯৩৫ সালের দিকে ভাঙ্গুরগাছা চর জেগে ওঠে। পরে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। তখন এই চর ছিল নদীর পূর্ব তীরে। ৯০ বছরে যমুনা ভেঙে প্রায় ১০ কিলোমিটার নদী পশ্চিম দিকে সরে এসেছে। এ নিয়ে পাঁচ দফা বিদ্যালয় ভবন সরাতে হয়েছে।

বন্যায় কাশিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর কর্নিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চকরতিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিরামের পাঁচগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে কোমরপানি দেখা দিয়েছে। চকরতিনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার রহমান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে এ বিদ্যালয় ভবন প্রতি বর্ষাতেই ভাঙন আর ঢলের মুখে পাঠদান বিঘ্নিত হয়েছে। এবারও যমুনার ঢলে শ্রেণিকক্ষ প্লাবিত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

চর কর্নিবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুস্তম আলী প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭৮ সালে স্থাপিত এ বিদ্যালয়টি যমুনার ভাঙনের মুখে পড়ায় এ পর্যন্ত চার দফা সরিয়ে নিতে হয়েছে। এখন শ্রেণিকক্ষে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় বলছে, সারিয়াকান্দি উপজেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৬৮টি। এর মধ্যে যমুনা ও বাঙ্গালি নদীর অব্যাহত ভাঙনে গত সাত বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, যমুনার অব্যাহত ভাঙনে প্রতিবছরই কোনো না কোনো বিদ্যালয় ভবন নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বর্তমানে ২১টি বিদ্যালয়ে ভবন নেই, টিনের বেড়ায় অস্থায়ী ঘরে পাঠদান চলছে। এর মধ্যে ১০টি বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গাও নেই। এ বছর যমুনার ঢলে ৪৫টি বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।