চট্টগ্রামে ৯ দিনে পুরো মাসের বৃষ্টি

৯ দিনের টানা বৃষ্টি পুরো জুলাই মাসে সম্ভাব্য মোট বৃষ্টির পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। এ সময় মোট বৃষ্টি হয়েছে ৮২৭ মিলিমিটার। বৃষ্টির পরিমাণ এবং স্থায়িত্ব এত বেশি ছিল যে চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ধসে মারা যায় সাতজন। গত রোববার থেকে বৃষ্টি কমে আসায় পানি নামতে শুরু করেছে।

আবহাওয়া দপ্তর প্রতি মাসে কী পরিমাণ বৃষ্টি হতে পারে তা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সে পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী জুলাই মাসে চট্টগ্রামে ২৩ দিন বৃষ্টি হওয়ার কথা রয়েছে। এই ২৩ দিনে চট্টগ্রাম এবং আশপাশের এলাকায় ৬৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে।

কিন্তু গত ৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে সম্ভাব্য সেই পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে এই বৃষ্টিপাত হয়েছে। রোববার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমে এসেছে। রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৪০ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ মো. মাজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া বিশ্লেষণ এবং পর্যবেক্ষণ করে প্রতি মাসে বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী জুলাই মাসে ২৩ দিনে ৬৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই কদিনে ওই পরিমাণ বৃষ্টি হয়ে গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আবহাওয়া এখন আর নিয়ম মেনে চলতে চায় না। বৃষ্টির আগে তীব্র গরম ছিল। এরপর টানা বৃষ্টিপাত হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী এই নয় দিনে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে—৬ জুলাই ৩৩ মিলিমিটার। এর পরদিন থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ৭ জুলাই ৯৪ মিলিমিটার, ৮ জুলাই ৭৪ দশমিক ৩, ১০ জুলাই ৭৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার, ১২ জুলাই ৮৫ দশমিক ৬ এবং ১৩ জুলাই ৩৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, বৃষ্টির সম্ভাব্য যে পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় তাঁর সঙ্গে মাস শেষে মিলিয়ে দেখা হয়। কেন বেশি হলো, কেন কম হলো এই কারণগুলো নির্ণয় করা হয়ে থাকে। চলতি মাসে আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১১ জুলাই ১৪৯ দশমিক ৮ মিলিমিটার এবং তার আগে ৯ জুলাই ১৪৩ মিলিমিটার। এই দুদিনই চট্টগ্রাম নগরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ পানিতে ডুবে যায়। বন্যা দেখা দেয় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, আউশ ধান এবং সবজি।

গত বৃহস্পতিবারের ভারী বৃষ্টির সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজার এবং বান্দরবানের যোগাযোগব্যবস্থা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

যোগাযোগ স্বাভাবিক হচ্ছে

প্রতিনিধি পটিয়া জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কের মহাসড়কের ডুবে থাকা চন্দনাইশের দোহাজারি এলাকা থেকে পানি অনেকটা নেমে গেছে। সড়কটির হাশিমপুর কসাইপাড়া এবং বড়পাড়া এলাকার দুটি স্থানে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত পানিতে ডুবে ছিল। ফলে এখনো যান চলাচল এখনো পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক হয়নি।

দোহাজারি হাইওয়ে পুলিশের টিআই মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কের রোববার (১৪ জুলাই) রাত প্রায় আটটা থেকে পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকায় যান চলাচলের গতি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। বর্তমানে সড়কে হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় একদিকে গাড়ি দাঁড় করিয়ে অন্যদিক থেকে একটা করে ছাড়া হচ্ছে। যানবাহন শুধু একদিকে চলাচলের ফলে সড়কের দুদিকে যানজট রয়েছে। তবে বড় যানবাহন চলাচল করলেও ছোট যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

ছোট যানবাহন চলতে গিয়ে গাড়িতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে যানজট বেড়ে যাচ্ছে।

চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আ ন ম বদরুদোজ্জা বলেন, মহাসড়কসহ এলাকায় পানি কিছুটা কমে এসেছে। তবে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও দুইটি পৌরসভার প্রায় গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে ডুবে আছে। এতে এখনো পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকার নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি রয়েছে।