চট্টগ্রামে এই পানিবন্দিত্ব আর কত দিন?

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান মান্নানের বাসা নগরের কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায়। গত সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে এই এলাকায় কোমরসমান পানি জমে যায়। ফলে একপ্রকার ঘরবন্দী হয়ে পড়ে তাঁর পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ে দূরে থাক, জলাবদ্ধতার কারণে পাশের আরেকটি ভবনে অসুস্থ নানিকেও দেখতে যেতে পারেননি তিনি।

শুধু আদনান মান্নান নন, জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর এ রকম দুর্ভোগে পড়ে চট্টগ্রাম নগরের লাখো মানুষ। এ দুর্ভোগ থেকে এ বছরও মুক্তি মিলছে না নগরবাসীর। জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চলমান থাকলেও এখন পর্যন্ত খালগুলোর খননকাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি। বাড়ানো হয়নি খালগুলোর গভীরতা ও প্রশস্ততা। ফলে একটু ভারী বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে নগরের বিভিন্ন এলাকা। চলতি বর্ষা মৌসুমের সামনের দিনেও এই দুর্ভোগ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার পর গত সাত দিনের ব্যবধানে তিনবার ডুবে গেছে নগরের অধিকাংশ এলাকা। এর আগে গত এপ্রিল ও মে মাসে দুবার জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে ২০১৭ সালের আগস্টে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। এর আগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি করে আসছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

অনুমোদনের প্রথম নয় মাসে প্রকল্পের কাজই শুরু করতে পারেনি সিডিএ। পরে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে তারা। গত বছরের ২৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

এ ছাড়া নগরের কোন খালের প্রশস্ততা ও গভীরতা কতটুকু হবে, কী পরিমাণ মাটি উত্তোলন করা প্রয়োজন, প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণসহ বিস্তারিত কাজের জন্য নকশা প্রণয়ন করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) দায়িত্ব দেওয়া হয়।
প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ১৭ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি প্রসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছে, তারা এখনো পর্যন্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নকশা বুঝে পায়নি। আবার সিডিএও প্রকল্প এলাকা ঠিক সময়ে বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে তারা কাজ করতে পারছে না।

>

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি কম
একটু ভারী বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে নগর

সরেজমিন
সম্প্রতি দেখা যায়, নগরের ফিরিঙ্গিবাজার খালে কচুরিপানা জমে আছে। খালে মাটির স্তূপ। প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণের জন্য গত শুষ্ক মৌসুমে দেওয়া বাঁধগুলোর অংশবিশেষ এখনো রয়ে গেছে।

পাথরঘাটার টেকপাড়া খালের পশ্চিম পাশে বিভিন্ন ধরনের অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। পূর্ব পাশে খালের জায়গায় চলাচলের জন্য পথ তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর মাঝখানে সরু অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। টেকপাড়ার পাশে কলাবাগিচা খাল আগাছায় ভরে গেছে। চাক্তাই খালের একটি অংশ ভরাট করা হয়েছে জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণের জন্য।

নকশা পেতে দেরি
নগরের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের সংস্কার ও উন্নয়নকাজের জন্য বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানকে খালগুলোর পুনঃখনন, খালের দুই পাড়ে আরসিসি প্রতিরোধ দেয়াল, কালভার্ট নির্মাণ, খালের পাশে রাস্তা নির্মাণ ও বালুর ফাঁদ (সিল্ট ট্র্যাপ) নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

খাল সংস্কারে যেসব প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয় বিশ্বাস বিল্ডার্স লিমিটেড এর একটি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, কার্যাদেশ পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত মাত্র চারটি খালের নকশা পেয়েছেন তাঁরা। তা–ও খণ্ডিত। আবার সিডিএ ঠিক সময়ে প্রকল্প এলাকা বুঝিয়ে দিতে পারেনি। ফলে কাজ করা যাচ্ছে না।

প্রকল্পের বাস্তবায়নের ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রকল্পের অধীনে ১৩টি খালের পূর্ণাঙ্গ নকশা প্রণয়ন করতে এক বছর সময় লেগেছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান গত এপ্রিলে নকশা বুঝিয়ে দিয়েছে। এখন নকশা অনুযায়ী কাজ হলে আগামী বছর ৫০ শতাংশ জলাবদ্ধতা নিরসন হবে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিকে, নকশা প্রণয়নে দেরি প্রসঙ্গে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।