মৌলভীবাজারে ব্যক্তির উদ্যোগে নর্দমা সাফ, স্বস্তিতে কেনাবেচা

চলছে নর্দমা পরিস্কারের কাজ। রোববার মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদরের কাঁচাবাজার এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
চলছে নর্দমা পরিস্কারের কাজ। রোববার মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদরের কাঁচাবাজার এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই নালা-নর্দমা উপচে পড়ে পানি। নোংরা পানিতে পাশের কাঁচাবাজারে থইথই অবস্থা। তার মধ্যেই স্থায়ী-অস্থায়ী খুচরা বিক্রেতারা পণ্য নিয়ে বসেন। কিন্তু ক্রেতারা সেই নোংরা-আবর্জনার পানি ঠেলে আসতে চান না।

বর্ষাকালে এটা মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা সদরের কাঁচাবাজারের চিরচেনা চেহারা। চার-পাঁচ বছর ধরে এই অবস্থা চললেও স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি—কেউই সমাধানে এগিয়ে আসেননি। অবশেষে নর্দমাটি পরিষ্কারে এগিয়ে এসেছেন রেজাউল করিম। তিনি পেশায় ঠিকাদার এবং রাজনগর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। বাড়ি রাজনগর সদর ইউনিয়নের গয়ঘর গ্রামে।

ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন বিকেলে রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের দুই পাশের ওই স্থানে বিভিন্ন পণ্যের দোকান সাজিয়ে বসেন খুচরা বিক্রেতারা। পান-সুপারি থেকে শুরু করে মৌসুমি সবজি এবং সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি হয় এই বাজারে। এ ছাড়া রাজনগর উপজেলা সদরের আশপাশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র চাষি নিজেদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এই বাজারে আসেন। শুকনা মৌসুমে তেমন সমস্যা থাকে না। বর্ষাকাল এলেই তাঁদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। কারণ, দিনে দিনে পাশের পানিনিষ্কাশনের নর্দমাটা ভরাট হয়ে গেছে। এখন ১০-১৫ মিনিট বৃষ্টি হলেই সেটা উপচে পানি এসে কাঁচাবাজার সয়লাব হয়ে যায়। জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। তখন অনেক পণ্য পানিতে ভিজে যায়। ব্যবসায়ীরা ইট-বাঁশ দিয়ে তৈরি উঁচু স্থানে পণ্য রাখতে পারলেও নিজেরা দাঁড়িয়ে থাকেন কাদাপানিতে। তখন সেখানে বেচাকেনার পরিবেশ থাকে না। ক্রেতারা এ নোংরা পানি ঠেলে কেনাকাটা করতে আসেন না। অনেকেই পণ্য বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির শিকার হন। আবার বৃষ্টি দেখলে অনেকে দোকানই মেলে বসেন না। সাধারণ পথচারীরাও এই পথ দিয়ে হাঁটাচলা করতে পারেন না। কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু কেউই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেননি।

রাজনগর কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা তপন দেব বলেন, ‘আমি যেখানে সবজি নিয়ে বসি, সব সময় সেখানে কাদাপানি জমে থাকে। বৃষ্টির কারণে বিকেলে এসে কাদার মধ্যে বসে ব্যবসা করতে পারছিলাম না। ক্রেতারাও কাদার মধ্যে আসতে চান না। লোকসান দিচ্ছিলাম। তাই কদিন থেকে দোকানই খুলছি না। ড্রেনটি পরিষ্কার করে দেওয়ায় এখন আবার দোকান খুলব।’

রাজনগর কাঁচাবাজারে বিক্রেতাদের দুর্ভোগের বিষয়টি চোখে পড়ে রেজাউল করিমের। তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি—সবার সঙ্গে নর্দমাটি পরিষ্কার করা নিয়ে কথা বলেন। সবাই তাঁকে সহযোগিতার আশ্বাস দিলে তিনি নর্দমা ও ফুটপাত পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেন। গত রোববার সকাল ১০টা থেকে নর্দমা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন। এ জন্য ২০ জন শ্রমিক নিয়োগ করেন। রোববার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত টানা পরিষ্কার অভিযান চালানো হয়। এতে এখন আর কাঁচাবাজারে পানি জমছে না। বৃষ্টির পানি নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে বাকি নর্দমা, ফুটপাতের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হবে।

রাজনগর সদর ইউপির চেয়ারম্যান দেওয়ান খয়রুল মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে ওই কাঁচাবাজারের নর্দমাটি পরিষ্কার করার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। আসলে তিনি বড় আকারে ড্রেনের কাজটা করাতে চেয়েছিলেন। এ জন্য বড় বরাদ্দের দরকার। ড্রেনের কাজ করানোর পরিকল্পনা আছে।