দেড় কোটি টাকার সরঞ্জাম বিক্রি হবে 'ভাঙারি দরে'

সিলেট নগরের প্রথম পদচারী সেতু। এভাবেই সেটি মানুষশূন্য থাকে। গতকাল বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্টে।  ছবি: প্রথম আলো
সিলেট নগরের প্রথম পদচারী সেতু। এভাবেই সেটি মানুষশূন্য থাকে। গতকাল বিকেলে নগরের কোর্ট পয়েন্টে। ছবি: প্রথম আলো

সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় দীর্ঘ দাবির মুখে স্থাপন করা হয়েছিল প্রথম পদচারী–সেতু (ফুটওভারব্রিজ)। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ২২ লাখ টাকা দরে সেটির সরঞ্জাম বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকার স্থাপনা বিক্রির এ সিদ্ধান্তকে ‘ভাঙারি দর’ বলে অভিহিত করছেন অনেকে।

কোর্ট পয়েন্ট সিলেট নগরের একটি ঐতিহাসিক স্থান। চারটি রাস্তার মিলনস্থল হওয়ায় রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন সংগঠন এখানে সভা-সমাবেশ করে। একটি সভা কিংবা সমাবেশ হলেই কোর্ট পয়েন্ট দিয়ে যান চলাচল তো দূরের কথা, পথচলাও দায় হয়ে পড়ে। যানজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। এই অবস্থা কাটাতে দাবি ছিল পদচারী–সেতু নির্মাণের। এ দাবির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ঘোষণা দিয়েছিলেন পদচারী–সেতু নির্মাণের। এ ঘোষণার সাত বছরের মাথায় যখন এটি বাস্তবায়ন শুরু হয়, তখন পাশের একটি বিপণিবিতান থেকে প্ররোচিত একটি মহল স্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলে। 

পদচারী-সেতু নির্মাণসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, ওই সময় স্থান নির্ধারণের বিরোধিতাকারীরা নানাভাবে বিরোধিতা করেছে। শেষ পর্যন্ত কাজটি যাতে ঝুলে পড়ে, এমন চেষ্টাও হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি ‘অর্থমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প’ হওয়ায় দ্রুত বাস্তবায়িত হয়। ‘ফুটওভারব্রিজ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, ব্যস্ততম এ পয়েন্টকে কেন্দ্র করে পদচারী-সেতু হলে কোর্ট পয়েন্টের পার্শ্ববর্তী সুরমা পয়েন্ট, বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার এলাকা দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারণের এই সেতু ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

‘ফুটওভারব্রিজ প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ ইস্পাত অ্যান্ড প্রকৌশল করপোরেশন তার নিজস্ব কোম্পানি ‘চিটাগাং ড্রাই ডক লিমিটেড’-এর মাধ্যমে। ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে এ পদচারী-সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০১৫ সালের ২১ মে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। চার মাসের মাথায় নির্মাণকাজ শেষে এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর। 

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৮ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মহানগরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে পর্যালোচনা সভায় পদচারী-সেতু স্থানান্তর করে দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বরে স্থাপনের প্রস্তাব ওঠে। তিন বছর পর সেই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অপসারণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হলে গত ২০ জুন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। ৭ জুলাই ছিল দরপত্র দাখিলের শেষ দিন। ওই দিন পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী দরদাতা প্রত্যাশিত না হওয়ায় নগরের কাজীরবাজার এলাকার ৭৫ জন ভাঙারি ব্যবসায়ীর সমন্বয়ে একটি ‘গ্রুপ’কে ২২ লাখ টাকায় সেতুর সরঞ্জাম ক্রয়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। 

দরপত্রে অংশগ্রহণকারী দুজন ও সিটির প্রকৌশল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা এ দরকে ‘ভাঙারি দর’ বলে মন্তব্য করেন। তাঁদের ভাষ্য, প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে অব্যবহৃত একটি স্থাপনার মূল্য অন্তত অর্ধেক হওয়া উচিত ছিল। এই অবস্থায় সেতু দ্রুত অপসারণের স্বার্থে কম দামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান দরপত্রের মাধ্যমে সেতুর সরঞ্জাম বিক্রির বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদ ২২ লাখ টাকায় বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে ঠিক, কিন্তু কত টাকায় বিক্রি করা হবে, কী প্রক্রিয়ায় হবে—এগুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আমরা সর্বশেষ পর্যায়ে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত নেব।’