দৌলতদিয়ার ২ ফেরি বিকল, এক ফেরিঘাট বন্ধ

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট মোড়ে গাড়ির তিন সারি হওয়ায় পথচারীদের চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় তোলা। ছবি: এম রাশেদুল হক
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার লঞ্চঘাট মোড়ে গাড়ির তিন সারি হওয়ায় পথচারীদের চলাচলেও সমস্যা হচ্ছে। ছবিটি আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় তোলা। ছবি: এম রাশেদুল হক

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল গোয়ালন্দ পয়েন্টে দুদিন ধরে দ্রুত পানি বাড়ছে। অস্বাভাবিক পানি বাড়ায় নদীর স্রোত বেড়েছে অনেক। পন্টুনের মাথা তলিয়ে যাওয়ায় ৫ নম্বর ফেরিঘাট আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে ৬ নম্বর ফেরিঘাট। দুটি ফেরি বিকল হওয়ায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। যানবাহন আটকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৩৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানির বিপৎসীমার পরিমাপ হচ্ছে ৮ দশমিক ৬৫ সেন্টিমিটার। আজ রাতে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দ্রুত পানি বাড়ায় দৌলতদিয়ার সব কটি ঘাটে ফেরি ভেড়া ও যানবাহন ওঠানামায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুনের মাথা রাতে তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল সকাল আটটা থেকে ঘাটটি বন্ধ করে স্থানান্তর (মধ্যম স্তর থেকে সরিয়ে উঁচু স্তরে বসানোর কাজ) করা হচ্ছে। এটি স্থানান্তর শেষ হলে ৩ নম্বর ঘাট স্থানান্তর শুরু হবে। এ ছাড়া ফেরিস্বল্পতা তো রয়েছেই।

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, দৌলতদিয়া ৬ নম্বর ঘাটে ছোট ফেরি ভেড়ে। প্রচণ্ড স্রোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির স্তর ও পন্টুন সমান হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে ফেরি ভিড়ছে। পাশের ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুনের মাথা তলিয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে ঘাট বন্ধ রেখে রেকারের সাহায্যে পন্টুন সরানো হচ্ছে। শুধু দুটি মাঝারি ফেরি ছাড়া সহজে অন্য ফেরি ভেড়ে না। ৩ নম্বর ঘাটের কাছে তীব্র স্রোত থাকায় একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ১ ও ২ নম্বর ঘাট দূরে হওয়ায় স্রোতের উজানে সহজে ফেরি যেতে চায় না। তাই ঘাট দুটিতে সহজে ফেরি ভেড়ে না। যানবাহন পারাপার ব্যাহত হওয়ায় ঘাট থেকে মহাসড়কে প্রায় তিন কিলোমিটার গাড়ির সারির সৃষ্টি হয়েছে। লঞ্চঘাট মোড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকাগামী অধিকাংশ গাড়ি ফেরিতে উঠতে তিন লাইন দিয়েছে। এ কারণে রিকশা ও পথচারী চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

পিরোজপুর থেকে ডাববোঝাই গাজীপুরগামী ট্রাকচালক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যার পর ঘাটের সিরিয়ালে আটকা পড়ি। দালালের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে পারাপারের টিকিট কাটায় ফেরিতে আগেভাগে ওঠার সুযোগ পাচ্ছি।’ দালালের নাম ও কত টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছেন জানতে চাইলে তা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন সোহাগ মিয়া।

খুলনা থেকে আসা ঢাকাগামী যাত্রীবাহী একটি পরিবহনের যাত্রী আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ঘাটে সিরিয়ালে বসে আছি। মাঝেমধ্যে কিছু বাস ডান পাশ দিয়ে ভিআইপি মর্যাদায় যাচ্ছে। এসব গাড়ি যায় কী করে বুঝতে পারছি না। অথচ আমাদের মতো শত শত মানুষ গরমে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি বলেন, ছয়টির মধ্যে একটি ঘাট বন্ধ রেখে স্থানান্তরের কাজ চলছে। ৬ নম্বর ঘাটে পানি ও পন্টুনের লেভেল এক রয়েছে। সঙ্গে প্রচণ্ড স্রোত দেখা দেওয়ায় ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে। বাকি চারটি ঘাটে স্রোতের কারণে স্বাভাবিকভাবে ফেরি ভেড়াতে সমস্যা হচ্ছে। এ ছাড়া ফেরিসংকট তীব্র হয়েছে। ১৫টির মধ্যে চালু রয়েছে ১৩টি ফেরি। আজ বেলা ১১টার দিকে বড় ফেরি গোলাম মওলা যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ে।