গণধর্ষণের পর মেয়েসহ বাবাকে হত্যার দায়ে ৫ জনের ফাঁসি

খুলনা নগরের বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকায় ধর্ষণের পর মেয়েসহ বাবাকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক মো. মহিদুজ্জামান এ রায় দেন।

ফাঁসির সাজা পাওয়া আসামিরা হলেন খুলনা নগরের লবণচরা থানাধীন বুড়ো মৌলভীর দরগা রোডের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম ওরফে পিটিল (৩০), মো. শরিফুল (২৭), মো. লিটন (২৮), আবু সাইদ (২৫) ও মো. আজিজুর রহমান ওরফে পলাশ (২৬)। রায় ঘোষণার সময় চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে ঘটনার পর থেকে শরিফুল পলাতক।

গণধর্ষণ ও হত্যার শিকার পারভীন সুলতানা এক্সিম ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর বাবার নাম ইলিয়াছ চৌধুরী।

পারভীনের মামলা পরিচালনা করেন রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি (পিপি) ফরিদ আহমেদ। এ ছাড়া তাঁকে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার পক্ষে জেলার সমন্বয়কারী মো. মোমিনুল ইসলাম ও কাজী সাব্বির আহমেদ।

রায় প্রসঙ্গে মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পারভীন সুলতানাকে গণধর্ষণের পর হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসি ও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পারভীনের বাবা ইলিয়াছকে হত্যা মামলার রায়ে পাঁচজনের ফাঁসি ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই হত্যা মামলায় মরদেহ গুমের চেষ্টায় প্রত্যেককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে মামলার বাদী রেজাউল আলম চৌধুরী বলেন, দ্রুত এই রায় কার্যকর হওয়ার আশা করছেন তিনি।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত চলাকালে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত পাঁচ আসামির মধ্যে চারজন গ্রেপ্তার হন। তাঁদের মধ্যে মো. লিটন ও সাইদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তাঁরা আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আসামিদের কয়েকজন পারভীনকে (২৬) দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করতেন। ঘটনার কয়েক মাস আগে তাঁদের একজন পারভীনের ওড়না ধরে টান দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাতে থাকা খাবারের বাটি দিয়ে পারভীন তাঁকে আঘাত করেন। এর প্রতিশোধ নিতে হত্যাকাণ্ডের দিন ওই আসামি স্থানীয় আরও চারজনকে সঙ্গে নিয়ে পারভীনের বাড়ির সামনে আসেন। এরপর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মই দিয়ে দেয়াল টপকে পারভীনদের বাড়ির ভেতর ঢোকেন। তাঁরা প্রথমে পারভীনের বাবা ইলিয়াসকে (৬০) শ্বাসরোধে হত্যা করেন। এরপর পারভীনকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেন। দুজনকে হত্যার পরে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন আসামিরা। এরপর আসামিরা পালিয়ে যাওয়ার সময় আলমারি থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যান।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে বুড়ো মৌলভীর দরগা এলাকার এপি ভিলার সেপটিক ট্যাংক থেকে ইলিয়াছ ও পারভীনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় ইলিয়াছ চৌধুরীর ছেলে রেজাউল আলম চৌধুরী বাদী হয়ে ২০ সেপ্টেম্বর লবণচরা থানায় হত্যা ও ২২ সেপ্টেম্বর পারভীনকে গণধর্ষণের মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লবণচরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কাজী বাবুল ২০১৬ সালের ২৪ মার্চ গণধর্ষণের মামলায় ও ৯ মে হত্যা মামলায় পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এই হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় মোট ৫০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।