ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে ৫৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল জাহেদ

আবু জাহেদ নয়ন
আবু জাহেদ নয়ন

ভুয়া পরিচয় দিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগে আবু জাহেদ নয়ন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত আবু জাহেদকে দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন। আদালতের আদেশে কাফরুল থানা-পুলিশ আবু জাহেদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুজ্জামান গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, আবু জাহেদ নয়ন নিজেকে কখনো পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক হিসেবে, আবার কখনো পরিচালকের গাড়িচালক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে নিজের চাচাসহ এলাকার অনেক লোকের কাছ থেকে ৫০ লাখের বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নয়ন।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়ার অভিযোগে জাহেদের চাচা আবুল খায়ের বাদী হয়ে কাফরুল থানায় গত রোববার মামলা করেন। জাহেদের বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম থানার সালেহপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবু তাহের।

মামলার কাগজপত্র এবং আবুল খায়েরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন আবু জাহেদ নয়ন। কয়েক বছর আগে নোয়াখালী থেকে ঢাকায় আসেন তিনি। ঢাকা থেকে এলাকায় যাওয়ার পর পরিচয় দেন যে, তিনি পাসপোর্ট অফিসে ডেটা এন্ট্রির কাজ পেয়েছেন। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ আছে। ২০১৬ সালে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। জাহেদের চাচা আবুল খায়েরের আত্মীয় নূর হোসেন ওই পদের জন্য আবেদন করেছিলেন। আবেদনের পর নূর হোসেনের মোবাইলে দুটি পৃথক নম্বর থেকে খুদে বার্তা আসে। খুদে বার্তায় লেখা ছিল, নূর হোসেন অফিস সহায়ক পদের জন্য মনোনীত হয়েছেন। নূর হোসেনের মনোনীত হওয়ার এই তথ্য পরে আবুল খায়েরকে জানানো হয়।

আবুল খায়ের সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, যে নম্বর থেকে নূর হোসেনের মোবাইলে খুদে বার্তা আসে, সেই নম্বরে তিনি কল দিয়েছিলেন। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক নারী কণ্ঠে বলা হয়, তাঁর নাম সানজিদা। তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আবু সাইদের ব্যক্তিগত সহকারী। কথিত সানজিদা আরেকটি মোবাইল নম্বর তাঁকে দেন। এও বলেন, ওই নম্বরটি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক আবু সাইদের। চাকরির নিয়োগের ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন সানজিদা। পরে ওই মোবাইলে খায়ের ফোন দেন। নিজেকে পরিচালক পরিচয় দিয়ে কথিত পরিচালক সাইদ বলেন, এই নিয়োগ কমিটির তিনি সচিব। তিনি চাইলে চাকরি দিতে পারবেন। অফিস সহায়ক পদে চাকরির জন্য একেক জনের লাগবে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা।

মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের গত ৮ এপ্রিল আবুল খায়ের কথিত পরিচালক আবু সাইদকে ফোন দেন। আবুল খায়েরকে সাইদ বলেন, তাঁর চালকের কাছে তিনি নিয়োগপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছেন। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর তিনি যেন চালকের কাছে টাকা দিয়ে দেন। সেদিন বেলা ২টার দিকে অপরিচিত মোবাইল থেকে খায়েরের কাছে ফোনে আসে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক আবু সাইদের চালক পরিচয় দিয়ে ওই ব্যক্তি মিরপুরের কাজীপাড়ার উড়াল সেতুর নিচে আসতে বলেন। পরে আবুল খায়ের দেখেন, পরিচালক আবু সাইদের চালক তাঁর ভাতিজা আবু জাহেদ। জাহেদ তখন তাঁর কাছে নিয়োগপত্র দেন।

আবুল খায়ের প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, জাহেদ তাঁকে সেদিন বলেছিল, পাসপোর্ট অফিসে অফিস সহায়ক, কম্পিউটার অপারেটর, সহকারী হিসাবরক্ষক পদে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ আছে। পরিচালক আবু সাইদের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন। জাহেদের কথা মতো আবুল খায়ের কথিত পরিচালক সাইদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। চাকরির আশ্বাস পেয়ে খায়ের নিজের ভাগনে কামরান হোসেনসহ নয়জনের কাছ থেকে নেওয়া মোট ৪৩ লাখ টাকা একটি ব্যাংক হিসাবে জমা দেন। আর ভাতিজা জাহেদের হাতে তিনি নগদ দেন আরও ১২ লাখ টাকা। এসব টাকা নিয়ে কথিত পরিচালক আবু সাইদ তাঁর ভাতিজা জাহিদের মাধ্যমে মোট ১০ জনের নিয়োগপত্র দেয়। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর কাজে যোগদান করতে গেলে জানা যায়, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এসব নিয়োগপত্র সবই ভুয়া। পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে এমন কোনো নিয়োগপত্র কাউকে দেওয়া হয়নি। এরপর থেকে কথিত পরিচালক আবু সাইদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলায় আবুল খায়ের আরও বলেন, কোনো উপায় না দেখে পরে তিনি নারায়ণগঞ্জে র‍্যাব-১১ কার্যালয়ে আসেন। কথিত পরিচালক আবু সাইদের দুটি মুঠোফোন নম্বর র‍্যাবকে দেন। প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে র‍্যাব আবু জাহেদকে আটক করে। কাজীপাড়া থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর জাহেদ র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনিই আবু সাইদ ও সানজিদা নামের ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করেছিলেন। অপর আসামি মাহমুদুল হাসানের সহযোগিতায় তিনি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ভুয়া নিয়োগপত্র বানান। এই মাহমুদুলকেও রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

কাফরুল থানা-পুলিশ ঢাকার আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছে, জাহিদ নিজেকে পাসপোর্ট অফিসের ভুয়া কর্মকর্তা পরিচয় দেন। ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে সর্বমোট ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। তদন্ত কর্মকর্তা ও কাফরুল থানার এসআই নুরুজ্জামান বলেন, প্রতারক জাহিদ এখন কাফরুল থানা হেফাজতে আছেন। ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন তিনি।