পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধে ভোগান্তিতে বাসিন্দারা

দেশের ৩২৮টি পৌরসভায় তিন দিন ধরে দাপ্তরিক ও সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন পৌরসভার বাসিন্দারা।

পৌরসভার কার্যক্রম বন্ধ রেখে গত রোববার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাঁদের একটাই দাবি, রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পেনশনসহ বেতন-ভাতা দিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে দেখা যায়, প্রেসক্লাবের সামনের ফুটপাতে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক শ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী। ভারী বৃষ্টির মধ্যে পলিথিনের ত্রিপল টানিয়ে বসে আছেন আন্দোলনকারীরা। কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। ‘মাস শেষে বেতন নাই, এ কেমন চাকরি ভাই’, ‘দেখ কত জ্বালা, পৌরসভায় তালা’ নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। খণ্ড খণ্ড মিছিল হচ্ছে।

টানা তিন দিন ধরে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় শহরের অলিগলিতে জমেছে ময়লার স্তূপ। সড়কবাতি না জ্বলায় ঘুট ঘুটে অন্ধকার পৌর এলাকায়। টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। কর সংগ্রহ, নাগরিক সনদ প্রদান, ট্রেড লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনসহ দৈনন্দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেবাগ্রহীতারা ফিরে যাচ্ছেন।

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বশেষ গত রোববার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবস্থান নিয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের শতভাগ বেতন-ভাতাসহ পেনশন চালুর দাবিতে আন্দোলন করছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১৬ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের শতভাগ বেতন-ভাতাসহ পেনশন চালুর দাবিতে আন্দোলন করছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ১৬ জুলাই। ছবি: আবদুস সালাম

ত্রিপলের নিচে মাথা গুঁজে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা করছিলেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা পৌরসভার রোলারচালক সত্যেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত মাস ধরে বেতন পাই না। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এলাকার দোকানিরাও এখন আর বাকি দিতে চান না।’

পৌরসভায় স্থায়ী ও মাস্টাররোল মিলিয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছেন ৩৫ হাজারের বেশি। সরকার ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেটের আওতায় দেশের পৌরসভাগুলোর বেতন-ভাতা খাতে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছিল, যা চাহিদার ১ শতাংশের কম।

পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুল আলীম মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, পৌর কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও শাস্তি দেয় সরকার, আর বেতন দেয় পৌরসভা। এভাবে আর চলতে পারে না। সরকারি কর্মচারী হয়েও তাঁরা আর্থিক, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারীদের শতভাগ বেতন-ভাতাসহ পেনশন চালু না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

প্রথম আলোর পঞ্চগড়, দিনাজপুর, পাবনা, জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, পৌরসভার অধিকাংশ কর্মী কেন্দ্রীয় আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে পৌরসভার মূল ফটক। ভবনের বাইরে ময়লা–আবর্জনা পরিষ্কার করার গাড়িগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।