'হামার এরশাদ মরে নাই'

জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের দাফনের সময় কান্নারত একজন। ছবি: মঈনুল ইসলাম
জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের দাফনের সময় কান্নারত একজন। ছবি: মঈনুল ইসলাম

রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ ময়দান লোকে লোকারণ্য। দলে দলে মানুষ ঢুকছেন ময়দানের তিন ফটক দিয়ে। নানা বয়সী নারী-পুরুষ আজ একজনের জানাজায় অংশ নিতে এসেছেন। যে মানুষটিকে তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছেন সচল, প্রাণবন্ত, আজ তিনি প্রাণহীন। সেই মানুষটি এইচ এম এরশাদ, বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি। তিনি আমৃত্যু জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। আজ এই মাঠেই তাঁর সর্বশেষ জানাজা হলো। আর নিজ বাড়ি পল্লী নিবাসে হলো তাঁর অন্তিম শয্যা।

এরশাদকে শেষবারের মতো দেখতে প্রত্যন্ত গ্রামের হতদরিদ্র মানুষজন আজ ছুটে এসেছিলেন। আজ খোলা ময়দানে প্রচণ্ড রোদের দিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। এঁদের কারও কারও হাতে ছিল নানা স্লোগান-সংবলিত প্লাকার্ড। এসব প্লার্ডের পোস্টারে কাঁচা হাতে লেখা, ‘পরকালে এরশাদ তুমি ভালো থাকো। তুমি না থাকলেও রংপুরবাসী তোমার সাথে আছে, থাকবে।’

লালমনিরহাটের সীমান্ত এলাকা পাটগ্রাম থেকে দল বেঁধে এসেছিলেন কিছু নারী। তাঁরা রোদে পুড়ে ময়দানে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন। এঁদের মধ্যে একজন রুবিনা বেগম বললেন, ‘হামার এরশাদ মরে নাই, হামার এরশাদ বাঁচি থাকবে হামারগুলার মনোত (মনে)।’

প্রিয় মানুষ এরশাদের প্রাণহীন দেহ দেখে এরশাদভক্তদের চোখে আজ জল নেমে আসে। অনেককে অনবরত রুমাল, পরনের পাঞ্জাবি কিংবা জামা তুলে চোখ মুছতেও দেখা গেছে।

রংপুর সদর উপজেলার সদ্যপুষ্করিণী ইউনিয়নের পালিচড়া গ্রামরে একজন কৃষক সোলেমান মিয়া। ষাটোর্ধ্ব মানুষটির হাতে এরশাদের ছবি। কিছু একটা জানতে চাইলেই হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে বলেন, ‘আইজকা (আজ) এরশাদ স্যারের জন্য রোজা রাখছি।’

এ সময় ঈদগাহ মাঠের মূল মঞ্চ থেকে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক কান্নাজড়িত কণ্ঠে পুরো আয়োজন মাইকে সঞ্চালনা করছিলেন। মুহূর্তে সেখানকার হাজারো মানুষের মুখগুলো বিষণ্ন হয়ে ওঠে।

এ ছাড়াও মরদেহ এরশাদের নিজ বাড়ি পল্লী নিবাসে নিয়ে যাওয়ার সময় কফিন বহনকারী গাড়ির সামনে বিলাপ করতে দেখা গেছে অনেক এরশাদভক্তকে। এভাবে রাস্তায় বিলাপ করতে করতে কিছু মানুষ প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক হেঁটে লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে পল্লী নিবাসে যায়। অনেকেরই বাড়ি রংপুর শহরে। আবার কারও সেই দূরের লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী জেলার দূরের কোনো গ্রামে।