যমুনার ঢলে ভেসে গেল কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

স্রোতের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে জলাশয়ে জাগ দেওয়া পাট। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিরামের পাঁচগাছি চর এলাকায়।  ছবি: সোয়েল রানা
স্রোতের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে জলাশয়ে জাগ দেওয়া পাট। গতকাল বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিরামের পাঁচগাছি চর এলাকায়। ছবি: সোয়েল রানা

প্রান্তিক কৃষক ইউনুস আলী। ধারদেনা করে এবার ১৬ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। ১১ বিঘার পাট কেটে খালে জাগ দিয়েছিলেন। বাকি জমির পাট কাটার কথা ছিল কয়েক দিন পর। দাম ভালো থাকায় তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন, পাট বিক্রির টাকায় দেনা শোধের পর চাল কিনবেন, কোরবানির গরু কিনবেন। কিন্তু যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ঢলের পানিতে ভেসে গেছে জাগ দেওয়া পাট। খেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাকি পাটও নষ্টের পথে। তাঁর সব স্বপ্ন এখন আর পূরণ হবে না।

 এভাবে ঢলের পানিতে স্বপ্নের ফসল পাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ইউনুস আলীর মতো হাজারো কৃষক।

গত সোমবার সকালে সারিয়াকান্দির চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের বিরামের পাঁচগাছি চরে বাঁধে দাঁড়িয়ে তলিয়ে থাকা পাটখেত দেখাচ্ছিলেন ইউনুস। তিনি বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে খরচ হয় ১০ হাজার টাকা। জমি পত্তনি খরচ ধরলে ১৫ হাজার। দাম ভালো হওয়ায় এবার বিঘাপ্রতি ১০ হাজার টাকা হিসাবে দেড় লাখ টাকা লাভ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।

 পাশের খাটিয়ামারি চরের বিস্তীর্ণ এলাকার পাটখেত আর আমন ফসল তলিয়ে গেছে। বুকপানির নিচে ডুবে থাকা দুই বিঘা জমির পাটখেত দেখাচ্ছিলেন বর্গাচাষি জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্গা চাষ করে সংসার চলে তাঁর। ঋণ নিয়ে তিনি এবার পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। তিন বিঘা জমির পাট কেটে জাগ দিয়েছিলেন। দুই বিঘা জমির পাট খেতেই ছিল। কিন্তু ঢলে ভেসে গেছে জাগ দেওয়া পাট। খেতের পাটও তলিয়ে গেছে পানিতে। তাঁর ক্ষতি লাখ টাকার বেশি। এখন তিনি নিঃস্ব।

 জাহিদুল বলেন, ‘বানের পানিত সব শ্যাষ। ঘরত ভাত নাই। হাতত টেকা নাই। বউ-ছল লিয়ে এখন না খ্যায়া থাকা লাগবি।’

 বিরামের পাঁচগাছি চরের বুলু মণ্ডল আড়াই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। পাট জাগ দিয়েছিলেন। ১৪ জুলাই এই পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য সাতজন শ্রমিকও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু সকালে গিয়ে দেখেন, জাগ দেওয়া সব পাট ভেসে গেছে। এখন তিনিও নিঃস্ব। বর্ষা শেষ হলে বর্গাচাষিরা কীভাবে জমিতে ধান আবাদ করবেন, তা নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন অনেকে।

বিরামের পাঁচগাছি চরের বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, ঢলের পানি সর্বনাশ করে গেল। শত শত বিঘা পাট ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে পাট, আউশ ধান, বীজতলা। এখন পানি নেমে গেলেও টাকার অভাবে কেউ জমিতে ধান লাগাতে পারবে না।

বাস শিমুলতাইর চরের বাসিন্দা আবদুল জব্বার বলেন, চোখের সামনেই ভেসে গেল কষ্টে ফলানো পাট। এখন পানি নেমে গেলে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবেন, তা ভেবেই দিশেহারা তিনি। পাট বিক্রির টাকায় দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগানোর কথা চায়না বেগমের। কিন্তু সেই আশার গুড়ে বালি।

 বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নিখিল চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বন্যায় ১০ হাজার ৪০১ হেক্টর জমির পাট, রোপা আউশ, আমনের বীজতলা, শাকসবজিসহ নানা জাতের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু ৫ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমির পাট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে ৬৬ হাজার ৩৫০ কৃষক পরিবার আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।