একাধিক খুনের মামলার আসামি আ.লীগের প্রার্থী

>

নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ মোট চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট গ্রহণ ২৫ জুলাই।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন রফিকুল ইসলাম রফিক। তিনি কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ দুটি মামলা রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র দেওয়ান আবুল বাশার বাদশার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তিনি কাঞ্চন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী, কাঞ্চন পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ও কাঞ্চন পৌর বিএনপির সহসভাপতি মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। আর জেলা যুবদলের সহসভাপতি আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

রফিকুল কাঞ্চন পৌর যুবলীগের সভাপতি। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে হত্যাসহ দুটি মামলা বর্তমানে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষী গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। অন্য দুটি মামলা নিষ্পত্তি ও খালাস দেখানো হয়েছে। হলফনামায় তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘স্বশিক্ষিত’। পেশার বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন, ‘ইন্সপায়ার প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’–এর পরিচালক। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।

রূপগঞ্জ থানার নথি অনুযায়ী, ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতে কাঞ্চন পৌরসভার কেন্দুয়ার টেক এলাকায় রফিকুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন দা দিয়ে মোক্তার হোসেনকে (৩৮) কুপিয়ে হত্যা করেন। মোক্তার হত্যা মামলায় রফিকুল অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। এ ছাড়া রফিকুলের বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৬ আগস্ট রাতে রূপগঞ্জ থানার কাঞ্চন পূর্বপাড়ায় মায়ের সামনে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে রাসেলকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সে সময় ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে মা শামসুন্নাহার নীলাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ওই মামলায়ও রফিকুল অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রফিকুলের বাবা মৃত হারুন মিয়া শ্রমিক ছিলেন। রফিকুল নিজেও শুরুতে তাঁত কারখানায় কাজ করতেন। পরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, মানুষের জমিতে বালু ভরাটসহ নানাভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হন। পুলিশ সূত্র জানায়, রফিকুলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও নানা অপরাধের অভিযোগে অর্ধশতাধিক সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। ‘ফাইভ স্টার’ নামে পরিচিত একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রধান রফিকুল। এলাকাবাসী জানান, ২০১৪ সালের ২৮ জুন কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ছিলেন রফিকুল। নির্বাচনের দিন সকালে রফিকুল ও তাঁর লোকজন ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা চালালে সুকোমল নামের এক ভোটার নিহত হন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দলে গ্রুপিংয়ের কারণে রাজনৈতিকভাবে আমাকে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ কারণে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে না।’ গত নির্বাচনে পরাজয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি না থাকায় ওই নির্বাচনে হেরেছিলাম। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটের ৭৫ শতাংশ আমি পাব।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র দেওয়ান আবুল বাশার হলফনামায় চারটি মামলা থাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন এবং তিনি জামিনে রয়েছেন। অপর দুটি মামলা খালাস ও নিষ্পত্তি দেখানো হয়েছে। তিনি ‘সাক্ষরজ্ঞান’সম্পন্ন। পেশায় ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড ব্যবসায়ী। তাঁর নগদ টাকা নেই। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে আবুল বাশার বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে এবারও জয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। গত পাঁচ বছরে রাস্তাঘাট, পার্ক, কিচেন মার্কেট, জলাবদ্ধতা নিরসনে পয়োনিষ্কাশন, তিনতলা পৌর ভবন নির্মাণসহ ৫০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান ভূঁইয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি। তাঁর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। হত্যাসহ আরও তিনটি মামলা নিষ্পত্তি দেখানো হয়েছে। পেশা ব্যবসা। তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মেসার্স আরিফ পোলট্রি ফার্ম বর্তমানে বন্ধ। মার্ল টেক্সটাইল অ্যান্ড ফ্রেম নামের একটি প্রতিষ্ঠনকে নরসিংদীতে পরীক্ষামূলক চালু অবস্থায় দেখানো হয়েছে। কৃষি খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।

মজিবুর রহমান বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি, ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা ভোট দিতে পারলে আমার জয় নিশ্চিত।’

আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিরুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ, এলএলবি। বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলা শুনানি এবং হাজিরা পর্যায়ে রয়েছে। দুটি মামলায় অব্যাহতি ও একটিতে খালাস দেখানো হয়েছে। তিনি ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী। আইন পেশা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমিরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি ধরেননি।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র পদপ্রার্থীসহ চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভোট গ্রহণ ২৫ জুলাই।