আমরা কোনো ব্র্যান্ডের বিপক্ষে নই: আ ব ম ফারুক

‘ঢাবি অধ্যাপকের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা: জনস্বার্থে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। ছবি: প্রথম আলো
‘ঢাবি অধ্যাপকের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা: জনস্বার্থে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। ছবি: প্রথম আলো

পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা করা অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছেন, ‘আমরা কোনো ব্র্যান্ড বা কোম্পানির বিরুদ্ধে নই। আমরা চাই দেশীয় দুগ্ধশিল্প বিকশিত হোক। বিদেশি দুধের বাজার তৈরি হোক—এটা আমরা চাই না। রাতারাতি আমাদের বিদেশি এজেন্ট বানানো যাবে না।’

আজ বুধবার এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন অধ্যাপক ফারুক। দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘ঢাবি অধ্যাপকের পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা: জনস্বার্থে করণীয়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, জনউদ্যোগ, বিসিএইচআরডি, সুবন্ধন, ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, এএসবিডি ও গ্রিনফোর্স।

বাজারে পাওয়া পাস্তুরিত দুধ দুই দফা পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের উপস্থিতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা মহলের রোষানলে পড়েন এই অধ্যাপক। তাঁর গবেষণার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। গত ২৯ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সীতেশ চন্দ্র বাছাড় এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ফার্মেসি বিভাগ কোনো ধরনের দায়ভার গ্রহণ করছে না।

এই প্রসঙ্গে আজকের সভায় অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমি খুব গুরুত্বপূর্ণ লোক নই। আমি একবারও বলিনি, আপনি বা আপনারা দায় নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো দায় নেওয়ার ব্যাপার নেই। আরে কী মুশকিল! আপনাকে তো কেউ দায় নিতে বলেননি। আপনি হঠাৎ করে মাঠে এসে বললেন, দায় নিতে পারব না।’

দুধের এই গবেষণা নিয়ে ৯ জুলাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন বলেন, ‘পিআর রিভিউ জার্নালে প্রকাশ হওয়ার আগেই গবেষক সাংবাদিকদের ফলাফল জানিয়েছেন। তাঁর গবেষণায় ত্রুটি ছিল, স্যাম্পল সঠিক ছিল না। তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে জবাব না এলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমাদের দোষারোপের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তারা ভোক্তাদের পক্ষে কথা না বলে মারমুখী হয়ে আছেন। কোম্পানির পক্ষের কথা কেন সরকারি কর্মকর্তারা বলবেন। ভোক্তার প্রত্যাশা ও কোম্পানির স্বার্থের মধ্যে সমন্বয় করে কথা বলেন। রাগারাগি করে এই সমস্যার সমাধান হবে না।’ আ ব ম ফারুক আরও বলেন, ‘পিআর রিভিউতে মৌলিক গবেষণা দিতে হয়। আমি যেটা করেছি, সেটা দুধে পানি ছিল কি না, তা বের করার গবেষণা। সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছে দুধে অ্যান্টিবায়োটিক আছে। পিআর জার্নালে গবেষণা প্রকাশ হতে এক থেকে দেড় বছর সময় লাগে। সেই জার্নালে প্রকাশের পর যদি আমি এই ফলাফল প্রকাশ করতাম, তাহলে জনগণ কি আমাকে ক্ষমা করত? পৃথিবীর কোনো দেশে জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ইস্যুগুলো পিআর জার্নালের মাধ্যমে আসতে হয় না।’

দুধ প্রক্রিয়াজাত করার সময়ে ত্রুটিতে অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোন আসতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলোকে ব্যবস্থাপনার দিকে একটু মনোযোগ দিতে হবে। কারখানাগুলোয় মান নিয়ন্ত্রণে এবং পাস্তুরিত দুধ প্যাকেটজাত করতে আরও সতর্ক থাকলেই এই সমস্যা হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করলেই হবে।’

ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সভাপতি অধ্যাপক এম আবু সাইদ বলেন, দুধে যে হরমোন বা অ্যান্টিবায়োটিক এল, এটা গাভির মধ্যে কি না বা কোন পর্যায় থেকে আসছে, এটাও গবেষণা করে বের করতে হবে। একজন সচিব একজন বিজ্ঞানী ও শিক্ষককে বিষোদ্‌গার করার এই স্পর্ধা কী করে পান—এ প্রশ্ন সবার কাছে। এর মূল কোত্থেকে এল, এগুলোও বিবেচনায় আসা উচিত।

সভাপতির বক্তব্যে পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘দুধের নামে কি আমরা দুধ খাচ্ছি, নাকি অন্য কিছু খাচ্ছি? খাদ্য নিয়ে আমরা প্রায় সবাই উদ্বিগ্ন। ২০০৫ সাল থেকে আমরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাদ্যের দাবিতে আন্দোলন করছি। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করছে।’