নওগাঁয় বাঁধ ভেঙে ভাসল ২২ গ্রাম
নওগাঁর মান্দা উপজেলায় আত্রাই নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে চারটি ইউনিয়নের অন্তত ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বাঁধভাঙা পানিতে শতাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া ফসলি জমি তলিয়ে গেছে ও মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর আগে গত সোমবার রাতে মান্দায় তিন জায়গায় আত্রাই নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়।
আজ বুধবার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার রাত থেকে আত্রাই নদের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। সোমবার রাতে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের শহরবাড়ি ভাঙ্গীপাড়া, চকরামপুর ও কয়লাবাড়ি এলাকায় আত্রাই নদের বেড়িবাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অতিরিক্ত পানির চাপে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার কশব ইউনিয়নের চকবালু এলাকায় বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় ১০০ ফুট এলাকা ভেঙে যায়। এতে প্রবল স্রোতে দ্রুত ফসলি জমির মাঠ ও লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে।
বাঁধভাঙা পানির তোড়ে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কশব, বিষ্ণুপুর, নুরুল্যাবাদ ও কালিকাপুর ইউনিয়নের অন্তত ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দী হয়ে পড়ে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। এসব এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধানের বীজতলা, বেগুন, মরিচ, কলা, পেঁপে, পটোল, করলা, বরবটিসহ বিভিন্ন সবজি খেত। এ ছাড়া তলিয়ে গেছে অন্তত ২৫০ পুকুর তলিয়ে গেছে।
বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কশব ইউনিয়নের চকবালু এলাকায় আত্রাই নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আজ দুপুর পর্যন্ত বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর, দাসপাড়া, চককামদেব, শিবপুর, চকশইল্যা, জোকাহাট, জসোপাড়া, চকরামপুর, কয়লাবাড়ি, দুর্গাপুর, কর্ণঘাট, পারশিমলা, বড়শিমলা ও মিঠাপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অর্ধশতাধিক কাচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। বন্যা-আক্রান্ত মানুষ বাঁধের ওপরে ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। বাঁধভাঙা পানিতে হঠাৎ বন্যার কারণে অনেকে আটকা পড়েছে। পর্যাপ্ত নৌকা না থাকায় তাঁরা এখনো নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছেন না।’
বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ভরট্ট শিবনগর গ্রামের বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, ‘বাড়ির সবাই হামরা ঘুমত ছিনু। রাত ৪টার দিকে মানুষের চিল্লানিতে (চিৎকার) ঘুম ভেঙে যায়। সবাই পানি পানি বলে চিল্লাচ্ছে। বাড়ির থেকে বের হতেই পানির শো-শো শব্দ শুনেই বুঝতে পারি বাঁধ ভেঙে গেছে। তখন মাল-ছামনা গোছ্যানা শুরু করি। বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার ওপর ওঠতেই গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। নিমেষেই পুরা গ্রাম পানিত তলায়ে গেল।’
দাসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণ চন্দ্রের পাঁচটি পুকুর তলিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে জানান। হঠাৎ পানি চলে আসায় মাটি দিয়ে পুকুরের পাড় উঁচু করে কিংবা পাড়ের চারপাশে নেট দিয়ে মাছ আটকানোর কোনো সুযোগ পাননি। এ ছাড়া তলিয়ে গেছে তিন বিঘা জমির মরিচ খেত। পটোলের খেতও নষ্ট হয়েছে বলে তিনি জানান।
কশব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খয়বর আলী প্রামাণিক বলেন, বাঁধ ভেঙে কশব ইউনিয়নের চকবালু, মনপুরা চকহরি, বনকুড়া ও নারায়ণপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পাঁচটি গ্রামের অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অন্তত ২০টি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। বন্যাদুর্গত মানুষ রাত থেকে বাড়ি ছাড়তে শুরু করে। তাঁরা বাঁধের রাস্তা ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, বন্যাকবলিত মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলা রাখতে বলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষজন এসব আশ্রয়কেন্দ্রে আসা শুরু করছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার, মোমবাতি, খাবার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।
নওগাঁ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শুধাংশু কুমার সরকার বলেন, দুপুর ১২টার দিকে আত্রাই নদের পানি বেড়ে শিমুলতলী পয়েন্টে ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রতিদিন গড়ে ১৮ সেন্টিমিটার করে পানির উচ্চতা বাড়ছে।