অংশ নেওয়া দুটি পরীক্ষায় 'এ' পেয়েছে ফেনীর নুসরাত

ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি আলিম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দুটি পরীক্ষায় ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। ওই দুটি পরীক্ষার পর আর পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি নুসরাত।

আজ বুধবার প্রকাশিত আলিম পরীক্ষার ফলে দেখা গেছে, কোরআন মাজিদ (বিষয় কোড ২০১) ও হাদিস (বিষয় কোড ২০২) পরীক্ষায় নুসরাত ‘এ’ গ্রেড পেয়েছেন। অন্য পরীক্ষাগুলোতে তাঁকে অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। এর কারণ তিনি ওই সব পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। ৬ এপ্রিল সকালে আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে মাদ্রাসায় এসে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার অনুসারীদের আগুন সন্ত্রাসের শিকার হন নুসরাত।

সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে এ বছর আলিম পরীক্ষায় নুসরাতসহ ১৭৫ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১৫২ জন পাস করেছেন। অকৃতকার্য হয়েছেন ২৭ জন। এ মাদ্রাসায় এবার পাসের হার ৮৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আজ বুধবার দুপুরে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আনন্দের মধ্যেও সেখানে ছিল শোকের ছায়া। ফল প্রকাশের পর নুসরাতের সহপাঠী ও স্বজনেরা ছিলেন শোকাতুর। মাদ্রাসায় পরীক্ষার ফল জানতে আসা সহপাঠীরা নুসরাতের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় উপস্থিত শিক্ষকদেরও কাঁদতে দেখা যায়। নুসরাতের দুই বিষয়ে পাস করার খবর পেয়ে মাদ্রাসা আঙিনায় সবার মধ্যে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।

এদিকে আলিম পরীক্ষার ফল প্রকাশের খবর পাওয়ার পর কান্নায় ভেঙে পড়েন নুসরাতের মা শিরিনা আক্তার। স্বজনেরা চেষ্টা করেও কোনোভাবে তাঁর কান্না থামাতে পারছিলেন না। শিরিনা আক্তার বলেন, যারা তাঁর মেয়েকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্ত হতে পারবেন না।

নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বোনের ফলাফলের প্রসঙ্গ উঠতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, নুসরাত খুব মেধাবী এবং পরিশ্রমী একজন ছাত্রী ছিল। আলিমের সবগুলো বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলে ভালো ফলাফলের পাশাপাশি জিপিএ ‘৫’ পেত । লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ প্রবল থাকায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সাহস নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে দাখিল পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও দুর্বৃত্তরা চুন মেরে নুসরাতের মুখ ঝলসে দেয়। তখন অসুস্থ শরীর নিয়ে নুসরাত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘এ’ গ্রেড পেয়েছিল।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তাঁর মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার সহযোগীরা নানাভাবে নুসরাতের পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। মামলা তুলে না নেওয়ায় গত ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে ছাদে ডেকে নিয়ে বোরকা পরা পাঁচজন হাত-পা বেঁধে শুইয়ে নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তাঁর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় একটি মামলা করেন। গত ২৮ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত শেষে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে ৮৬৯ পৃষ্ঠার নথি ও অভিযোগপত্র দাখিল করে। বর্তমানে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।