কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল

স্রোতের কারণে গাড়ি পারাপারে সমস্যা হওয়ায় দৌলতদিয়া থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। পদ্মার মোড়, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ১৭ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক
স্রোতের কারণে গাড়ি পারাপারে সমস্যা হওয়ায় দৌলতদিয়া থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। পদ্মার মোড়, গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী, ১৭ জুলাই। ছবি: এম রাশেদুল হক

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া এবং রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে তীব্র স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। থেমে থেমে চলাচল করছে ফেরি। প্রচণ্ড গরম ও ভিড়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রী ও চালকেরা। ঝুঁকি নিয়ে চলছে লঞ্চ ও স্পিডবোট।

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ১৮টি ফেরির মধ্যে চলাচল করছে মাত্র ৫টি। ফেরি চলাচল কমে যাওয়ায় উভয় পারে আটকা পড়েছে অন্তত আট শতাধিক যানবাহন। তবে যাত্রীবাহী পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্সসহ পচনশীল কাঁচামালবাহী যানবাহনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্রে জানা গেছে, কাঁঠালবাড়ি ও শিমুলিয়া নৌপথের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা চলাচল করেন। মঙ্গলবার থেকে পদ্মায় অস্বাভাবিক হারে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল।

বুধবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাট এলাকায় দেড় কিলোমিটার সড়কে পাঁচ শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। কোনো কোনো পণ্যবাহী ট্রাক তিন থেকে চার দিন ধরে বসে আছে টার্মিনালে। ভ্যাপসা গরমে ঘাট এলাকায় অলস সময় পার করছেন যানবাহনের চালকেরা। কাঁঠালবাড়ির চারটি ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে ৭টি ফেরি। যে ৫টি ছোট ফেরি চলাচল করছে, তা আবার ব্যক্তিগত ও হালকা যান তুলে ছেড়ে যাচ্ছে।

ঝিনাইদহ থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাকের চালক আয়নাল হোসেন বলেন, ‘এমনে ঘাটে বইয়া থাইকলে মোগের পেট চলে না। কয়ডা দিন আয় নাই, তাই বাড়িতেও টাকা পাডাইতে পারি নাই।’

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে তীব্র স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এতে ঘাট এলাকায় আটকা পড়েছে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক। কাঁঠালবাড়ি, মাদারীপুর, ১৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে তীব্র স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। এতে ঘাট এলাকায় আটকা পড়েছে কয়েক শ পণ্যবাহী ট্রাক। কাঁঠালবাড়ি, মাদারীপুর, ১৭ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল থেকে ছেড়ে আসা মাইক্রোবাসের চালক ইলিয়াস খান বলেন, ‘সকাল ৯টায় ঘাটে এসেছি। অনেক জ্যাম ছিল। পরে একটার দিকে ফেরিতে উঠেছি অনেক কষ্টে। এমন পরিস্থিতি হলে আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।’

কাঁঠালবাড়ির ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) উত্তম কুমার শর্মা বলেন, তীব্র ঘূর্ণি স্রোতের কারণে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। থেমে থেমে চলছে কয়েকটি ফেরি। এতে ঘাট এলাকায় যানবাহনের কিছুটা চাপ রয়েছে।’

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন মিয়া বলেন, মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। প্রায় দ্বিগুণ সময় নিয়ে পাঁচটি ফেরি চলাচল করায় ঘাটের উভয় পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক শ যানবাহন। আমরা আমাদের সাধ্যমতো যানবাহন পারাপার করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প নৌরুট হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথেও তীব্র স্রোতে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। বিকল হয়ে পড়েছে ৩টি ফেরি। স্রোতের কারণে গাড়ি পারাপারে সমস্যা হওয়ায় দৌলতদিয়া থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পড়েছেন দুর্ভোগে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত দুই দিনে প্রায় ৬৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে প্রায় ২৯ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অস্বাভাবিক গতিতে পানি বাড়ায় নদীতে প্রচণ্ড স্রোত দেখা দিয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আবদুল্লাহ রনি বলেন, এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ও ভাঙন দেখা দিলে আসন্ন ঈদুল আজহায় যানবাহন পারাপার নিয়ে হিমশিম খেতে হবে।