কাপ্তাই লেকে পানি বেড়েছে, ঝুলন্ত সেতু পানির নিচে

গত আট দিনের টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকের পানি বেড়ে রাঙামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুটি তলিয়ে গেছে। আজ বুধবার বিকেলে তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
গত আট দিনের টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকের পানি বেড়ে রাঙামাটির পর্যটনের ঝুলন্ত সেতুটি তলিয়ে গেছে। আজ বুধবার বিকেলে তোলা। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

টানা বৃষ্টিতে রাঙামাটির কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এতে কাপ্তাই বাঁধের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ১৬ দরজাই খুলে দেওয়া হয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন স্থাপনা তলিয়ে গেছে। এ কারণে বিভিন্ন হোটেল-মোটেলে পর্যটক নেই বলে জানিয়েছেন পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আট দিন ধরে রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টি হয়। এতে কাপ্তাই লেকের পানি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গত সোমবার থেকে কর্ণফুলী, কাচালং মাইনী, চেঙ্গী নদীসহ বেশ কিছু ছড়ার পানি কাপ্তাই লেকে এসে পড়ে। এতে জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানসহ বিভিন্ন উপজেলায় শত শত বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। এ ছাড়া রাঙামাটির একমাত্র আকর্ষণ ঝুলন্ত সেতু তলিয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকলে আজ বুধবার দেড় থেকে দুই ফুট ডুবে যায়। এরপর রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের ঝুলন্ত সেতুতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

পানিতে ডুবে গেছে ঝুলন্ত সেতু। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
পানিতে ডুবে গেছে ঝুলন্ত সেতু। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকের পানি অস্বাভাবিক বেড়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত করতে ইতিমধ্যে ১৬টি দরজাই খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে প্রত্যক দরজায় ১৮ ইঞ্চি করে পানি ছেড়ে দেওয়া হয়। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট রয়েছে। এর ৫ ইউনিটে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট থাকায় দুটি ইউনিটে চালু করে ৬০ থেকে ৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। বৃষ্টি হওয়ায় কাপ্তাই লেক এখন কানায় কানায় পূর্ণ।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স ও হোটেল ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের দুটি হোটেল ও ছয়টি কটেজে ৮৭টি কক্ষ রয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু তলিয়ে যাওয়ায় দু-একটি কক্ষ ছাড়া সব শূন্য । এ ছাড়া রাঙামাটিতে বেসরকারি ৪৫টি হোটেল-মোটেল রয়েছে। এসব হোটেল-মোটেলে প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি অতিথি থাকতে পারবেন। এসব হোটেল-মোটেল কয়েক দিন ধরে প্রায় শূন্য।

আজ বেলা তিনটার দিকে পর্যটন কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতুতে গিয়ে দেখা যায়, ঝুলন্ত সেতুতে কচুরিপানা ও বাঁশ-গাছের গুঁড়ি আটকে রয়েছে। ঝুলন্ত সেতুর ফটকে পর্যটকদের যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা জারির সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পর্যটন কর্তৃপক্ষ প্রবেশ ফটকে ডুবো সেতুতে না ওঠার জন্য বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দিয়েছে। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা
পর্যটন কর্তৃপক্ষ প্রবেশ ফটকে ডুবো সেতুতে না ওঠার জন্য বিজ্ঞপ্তি টানিয়ে দিয়েছে। ছবি: সুপ্রিয় চাকমা

বেসরকারি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মো. মুঈনুদ্দিন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে হোটেল-মোটেলগুলো প্রায় পর্যটকশূন্য রয়েছে। দু-একটি কক্ষ ছাড়া সব কক্ষ এখন বন্ধ। আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি, আগামীতে ঈদের ছুটিতে যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে হোটেল-মোটেলে কর্মচারী ছাঁটাই করতে হবে। কাপ্তাই হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় গতকাল থেকে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুও তলিয়ে গেছে।

রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সে ব্যবস্থাপক সুজন বিকাশ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে ঝুলন্ত সেতুতে অল্প পানি ওঠে। দুপুরের মধ্যে হাঁটুসমান হয়। এখন হাঁটুর ওপরে সেতুটি ডুবে রয়েছে। আমরা পর্যটকদের ঝুলন্ত সেতুতে না যাওয়ার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। টানা বৃষ্টি ও ঝুলন্ত সেতু পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় হোটেল-কটেজগুলোর দু-একটি কক্ষ ছাড়া সবই খালি পড়ে রয়েছে।

কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এস এস এ আবদুর জাহেদ প্রথম আলোকে বলেন, টানা বৃষ্টিতে কাপ্তাই লেকের পানি বেড়ে গেছে। আমাদের লেকে স্বাভাবিক লেভেল ১০৯ ফুট। লেক ভরাট হয়ে যাওয়ায় ১০৫ ফুট হলে অনেক কিছু তলিয়ে যায়। সে জন্য বাঁধ ঝুঁকিমুক্ত করতে ১৬টি দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক দরজায় প্রথম ৬ ইঞ্চি, পরে ১২ ইঞ্চি এখন ১৮ ইঞ্চি পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়।