জামালপুরে বন্যার্তদের খাবারের জন্য হাহাকার

কাছে আছে সামান্য কিছু চাল। সেই চাল চুলায় বসিয়ে ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মা। গতকাল দুপুরে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপর।  ছবি: প্রথম আলো
কাছে আছে সামান্য কিছু চাল। সেই চাল চুলায় বসিয়ে ক্ষুধার্ত সন্তানদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মা। গতকাল দুপুরে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মের ওপর। ছবি: প্রথম আলো

বন্যায় জামালপুরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী নেই। খোলা হয়নি পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় অনেক দুর্গত মানুষ রাস্তা, রেলওয়ে স্টেশন ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

গতকাল বুধবার ভোররাত সাড়ে চারটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন দুর্গত এলাকা ঘুরে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বড় বিপদে আছে শিশুরা। তাদের খাবারের সংকট চরম। আসলে খাবারই এখন শিশুসহ সব দুর্গত মানুষের প্রধান চ্যালেঞ্জ। 

দুপুর ১২টায় নৌকায় করে দেওয়ানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে যাত্রা। স্টেশনের চারপাশে কোমরসমান পানি। এখনো পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সকাল থেকে স্টেশনের প্ল্যাটফর্মেও পানি উঠেছে। প্ল্যাটফর্মে মনিরা বেগম নামের এক গৃহিণী আশ্রয় নিয়েছেন। প্ল্যাটফর্মের এক কোনায় তাঁর আট মাস বয়সী মেয়ে হামিদা ঘুমিয়ে আছে। হামিদার পাশেই তার ছয় বছর বয়সী বোন মুন্নী বসে রয়েছে। সেখানে কিছু থালাবাসনও রাখা। মনিরা বেগম জানালেন, সকাল থেকে তাঁর সন্তানেরা না খাওয়া। কী রান্না করবেন ভাবছেন। কারণ, বানের পানিতে ভিজে যাওয়া কিছু চাল ছাড়া তাঁর কাছে আর কিছুই নেই। 

মনিরা বেগমের স্বামী রাজমিস্ত্রি। মনিরা বলেন, তাঁদের (স্বামী-স্ত্রী) না খেলেও চলে। কিন্তু শিশুসন্তানদের কোনো খাবার দিতে পারছেন না। তারা কান্নাকাটি করছে খাবারের জন্য। সাহায্য বলতে মঙ্গলবার রাতে এখানে তিনটি করে রুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভাগ্য খারাপ তাঁর। রাতে ঘুমিয়ে থাকায় সেই রুটিও পাননি তিনি। তাঁর আরজি, বড়দের খাবারের পাশাপাশি শিশুদের যদি কেউ খাবার দিত!

>জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি
দুর্গত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী নেই
জেলা প্রশাসনেও ত্রাণ নেই
খাদ্যসংকটে দুর্গত মানুষ

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চারপাশে বুকসমান পানি। ইউএনওর বাসভবনে পানি। লোকজন নৌকায় চলাচল করছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরেও কোমরসমান পানি। সবচেয়ে উঁচু স্থান দেওয়ানগঞ্জ থানা। সেখানেও হাঁটুপানি। এ উপজেলার সব সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের বাজারে বুকসমান পানি। 

সবচেয়ে বন্যাদুর্গত উপজেলা ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভাসহ সবগুলো ইউনিয়নের বেশির ভাগ অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলার সাতটি উপজেলার ৬৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫২টি ইউনিয়ন, ৫টি পৌরসভা বন্যাকবলিত। ইসলামপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সারা জেলায় বন্যার কারণে প্রায় ৩০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার কথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জের গুজিমারি, চুকাইবাড়ী, চিকাজানী, আজিমপুরা, বালুগ্রাম, দক্ষিণ বালুগ্রাম, ইসলামপুরের বেলগাছা, জারুলতলা, পাথর্শী, মুরাদাবাদ ও কুলকান্দি গ্রামে নৌকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ঘর পানিতে তলিয়ে আছে। গ্রামগুলো প্রায় জনশূন্য। 

ইসলামপুরের চিনডুলি বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০টি পরিবার ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করছে। অনেকে আবার খোলা আকাশের নিচে। চিনাডুলি যমুনা নদীর বাঁধের ধারে দেখা গেল অনেক মানুষের ভিড়। বামনা গ্রামের রবিউল ইসলাম, আকলিমা বলেন, দুর্ভাগ্য তাদের পিছু ছাড়ছে না। নদীভাঙন ও বছর বছর বন্যায় সব ভাসিয়ে নেয়। তাদের কষ্টের সীমা নেই।

জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) রাজীব কুমার সরকার বলেন, এই মুহূর্তে তাঁদের কাছে কোনো ত্রাণসামগ্রী নেই। তবে দ্রুত ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর জন্য বরাদ্দ চেয়ে পাঠিয়েছেন। হয়তো শিগগিরই নতুন করে আরও বরাদ্দ পাওয়া যাবে। বরাদ্দ পেলেই ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো হবে।