উত্তরের মশা মারার নিষিদ্ধ ওষুধ দক্ষিণে কার্যকর

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় মান উত্তীর্ণ নয়। ছিটালে মশা তেমন মরে না। তাই মশকনিধনের ওষুধটির ব্যবহার বন্ধ করে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। কিন্তু একই ওষুধ এখনো ব্যবহার করে যাচ্ছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তাদের দাবি, ওই ওষুধ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

আগে দ্য লিমিট অ্যাগ্রো প্রডাক্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের ‘লিমিট লিকুইড ইনসেকটিসাইড’ নামের ওষুধটি ব্যবহার করত দুই সিটি করপোরেশন। উত্তর সিটি করপোরেশন ওই ওষুধ পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্ল্যান্ট প্রোটেকশন উইংয়ে (পিপিইউ) পাঠায়। সেখানে পরীক্ষায় ওষুধটি মানোত্তীর্ণ হয়নি। তাই ডিএনসিসিতে ওই ওষুধের ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মশা নিধনে বর্তমানে ডিএনসিসি নকন লিমিটেডের ‘নকন মসকিউটো ইনসেকটিসাইড’ নামের ওষুধটি ব্যবহার করছে।

৭ জুলাই সচিবালয়ে ঢাকায় মশা নিধন কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা সভায় ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছিলেন, লিমিট অ্যাগ্রো প্রডাক্টের ওষুধ তিনবার পরীক্ষা করলেও মানোত্তীর্ণ হয়নি। তাই এই প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ কোম্পানি ডিএনসিসির কোনো টেন্ডারে আর অংশগ্রহণ করতে পারবে না। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন উপস্থিত ছিলেন।

ডিএনসিসির প্রধান ভান্ডাররক্ষক ও ক্রয় কর্মকর্তা জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এই ওষুধ তিনবার পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রথম দফায় মরেছে ২ শতাংশ মশা, দ্বিতীয় দফায় ১৮ শতাংশ এবং তৃতীয় দফায় ৫০ শতাংশ মশা মরেছে। কোনোবারই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ফল পাওয়া যায়নি। এ কারণে তাঁদের এক বছরের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলেন, অন্তত ৯০ শতাংশ মশা মরলে ওই ওষুধকে ভালো মানের বলে মনে করা হয়।

এ ছাড়া গত ২২ মে আইসিডিডিআরবি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ছিটানো ওষুধে মশা মরছে না। সব জেনেও কর্তৃপক্ষ মশা মারার ওষুধ পরিবর্তনে পদক্ষেপ নেয়নি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত রাজধানীর ৮টি এলাকায় এডিস মশা নিয়ে গবেষণা করে আইসিডিডিআরবি।

>পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় লিমিট লিকুইড ইনসেকটিসাইড নামের ওষুধ নিষিদ্ধ করেছে উত্তর সিটি
তা এখনো ব্যবহার করে যাচ্ছে দক্ষিণ সিটি

উত্তরের কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ওষুধ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ব্যবহারের কারণ জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শরীফ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ওষুধ ব্যবহারের আগে আমরা আইইডিসিআর ও প্ল্যান্ট প্রোটেকশন উইংয়ে (পিপিইউ) পরীক্ষা করেছি। সেখানে তারা বলেছে, ওষুধ ঠিক আছে।’ তিনি বলেন, এরপরও যেহেতু বিষয়টি নিয়ে এত কথা হচ্ছে, তাই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সামনের সপ্তাহে ডিএসসিসি আবার বসার চেষ্টা করবে।

একই জায়গা থেকে একই ওষুধের পরীক্ষার পর ফল দুই রকম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা প্রথম আলোকে বলেন, একই ওষুধের ফল ভিন্ন হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ওষুধের সব উপকরণ ঠিক থাকলে এটা হওয়ার কথা নয়। তাঁদের কাছে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আসে। সেগুলোর নানান পরীক্ষা হয়। তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার ক্ষেত্রে ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি আলাদাভাবে ওষুধের নমুনা পাঠিয়েছিল। তাদের পাঠানো নমুনাতে একই উপকরণ ছিল কি না, তা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এত দিনেও ওষুধ পরিবর্তন করার পদক্ষেপ না নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ হয় বৈজ্ঞানিক তথ্য অস্বীকার করছে, না হয় জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্বহীন মনে করছে। জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অবহেলা ক্ষমার অযোগ্য।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডিএসসিসি গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ১৭ কোটি টাকার মশার ওষুধ কিনেছিল। চলতি অর্থবছরে সংস্থাটি প্রায় ২৮ কোটি টাকার ওষুধ কেনার কথা ভাবছে। আর ডিএনিসিসি গত অর্থবছরে ১৮ কোটি টাকার ওষুধ কিনেছে। চলতি অর্থবছরে ওষুধ ক্রয়ের খাতে কয়েক কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখবে বলে জানা গেছে।