দুধ নিয়ে বিপাকে খামারিরা

নিজেদের খামারে উৎপাদিত দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারিরা। বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। খামারিদের অভিযোগ, তাঁরা এখন খামারে উৎপাদিত দুধের একটি অংশ স্থানীয়ভাবে পানির দরে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

এদিকে কোম্পানিগুলো বলছে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান পাওয়ার খবরে বাজারে তরল দুধ বিক্রি কমে গেছে। এ কারণে তারা দুধ সংগ্রহ কমাতে বাধ্য হয়েছে। 

সম্প্রতি দুই দফা তরল দুধ পরীক্ষা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য উপাদান পাওয়ার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষক আ ব ম ফারুক। আর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতকে জানিয়েছে, ১০টি ব্র্যান্ডের দুধে মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা পাওয়া গেছে। খোলা দুধেও কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। 

এর আগে গত ২৫ জুন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) জানিয়েছিল, তাদের অনুমোদিত ১৪টি ব্র্যান্ডের ১৮টি দুধে ক্ষতিকর কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে দুধ কিনতে দ্বিধা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। 

দেশের কোম্পানিগুলো যে দুধ সংগ্রহ করে তার কেন্দ্র পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ। এ দুই জেলার দুধ উৎপাদনকারী কয়েকটি উপজেলায় লক্ষাধিক খামারির আয়ের উৎস দুধ বিক্রি। ওই অঞ্চল থেকে মিল্ক ভিটা, আড়ং, প্রাণসহ কয়েকটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান তরল দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করার পর প্যাকেটজাত করে সারা দেশে বিক্রি করে। খামারিরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রহমূল্য বাড়িয়ে লিটারপ্রতি কমপক্ষে ৪৫ টাকা করার দাবি জানিয়ে আসছেন, যা এখন ৪০ টাকার কম। 

এবারের বাজেটে দেশীয় খামারিদের সুরক্ষা দিতে গুঁড়া দুধ আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু খামারিরা বাড়তি দামের বদলে উল্টো এখন দুধ বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। 

>কোম্পানিগুলো যে দুধ সংগ্রহ করে তার কেন্দ্র পাবনা ও সিরাজগঞ্জ
পাবনা-সিরাজগঞ্জে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়
দুই জেলার কয়েক উপজেলায় লাখো খামারির আয়ের উৎস দুধ বিক্রি
ক্ষতিকর উপাদান পাওয়ার খবরে বাজারে তরল দুধ বিক্রি কমে গেছে
কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে
কম দামে খোলাবাজারে বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন খামারমালিকেরা


পাবনার বেড়া পৌর এলাকার জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত খামারি মাহফুজা মীনা বলেন, ‘খামারিদের এখন কঠিন সময় চলছে। গত কয়েক মাসে গো-খাদ্যের দাম ব্যাপক বেড়েছে। অথচ দুধের দাম এক পয়সাও বাড়েনি। উল্টো যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে খামার গড়ে উঠেছে সেই খামারগুলোই এখন দুধ নিচ্ছে না।’ তিনি বলেন, খামারিরা এখন খোলাবাজারে পানির দরে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

খামারি ও কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। গত কয়েক দিনে কোম্পানিগুলো দুধ সংগ্রহ ৩০–৪০ শতাংশ কমিয়েছে। 

জানতে চাইলে মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাজারে বিক্রি কম। এ কারণে আমরা পর্যাপ্ত দুধ নিতে পারছি না। এতে খামারিরা বিপাকে পড়বেন, এটা স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, শুধু দেশি তরল দুধ কেন পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিদেশি গুঁড়া দুধ পরীক্ষা কেন করা হচ্ছে না। নিম্ন মানের বিদেশি গুঁড়া দুধ ভেজিটেবল ফ্যাট মিশিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে, সেটা নিয়ে কথা হচ্ছে না। মিল্ক ভিটার দুধ সিঙ্গাপুর ও আরেকটি দেশে পরীক্ষার উদ্যোগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

প্রাণের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াস মৃধা বলেন, মানুষ কয়েক সপ্তাহ ধরে দুধ কেনা নিয়ে দ্বিধায় আছে। তরল দুধ তো দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায় না। বিক্রি কম, তাই সংগ্রহ কম। প্রাণ তালিকাভুক্ত খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১০ বছর আগে যে প্রক্রিয়ায় দুধ উৎপাদন হতো, তার চেয়ে এখনকার প্রক্রিয়া অনেক বেশি সুসংগঠিত, বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু বাজেটের চার দিন আগে থেকে দেশীয় দুধের মান নিয়ে কথা বলা শুরু হলো। 

ইলিয়াস মৃধা আরও বলেন, যদি সমস্যা থেকেই থাকে সেটা জাতীয় সমস্যা। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধান করা, কাদা–ছোড়াছুড়ি নয়।