সিরাজগঞ্জে পরিবহন ধর্মঘট

সিরাজগঞ্জ জেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে আছে বাস। ছবি: প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জ জেলায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বন্ধ হয়ে আছে বাস। ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে জেলা মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। সিরাজগঞ্জ বাস মালিক সমিতি ও ঢাকার মহাখালী বাস মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরেই এই ধর্মঘট।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জেলার সব রুটে বাস, মিনিবাস, ট্রাক-ট্যাংকলরি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বন্ধ রয়েছে। আর এতে দুর্ভোগে পড়েছে শত শত যাত্রী।

জেলা মালিক–শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, কয়েক দিনের চেষ্টার পরও দ্বন্দ্ব নিরসন না হওয়ায় জেলার সব পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন মিলে এই কর্মসূচি দিয়েছে। তারপরও যদি দ্বন্দ্ব নিরসন না হয়, তাহলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় বাস চলাচল করতে না দিলে ১৮ জুলাই থেকে সিরাজগঞ্জে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন সিরাজগঞ্জ পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। গত সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সভাপতি জিন্নাহ আলমাজি ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার সব রুটে বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের পরিবহন অনির্দিষ্টকালে জন্য বন্ধ।

সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতি সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই মহাখালী সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি গত ২ জুন সেবা লাইন নামে ১৪টি বাস নিয়ে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ শহর পর্যন্ত কাউন্টার সার্ভিস চালু করে। এতেই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের সময় হওয়ায় বিষয়টি তখন নিষ্পত্তি করা যায়নি। এ নিয়ে ৯ জুলাই উভয় পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। সভায় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে ১০ দিনের সময় দেওয়া হয়। ১১ জুলাই মহাখালী সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বিষয়টি অমান্য করে ঢাকার গাবতলী ও মহাখালীতে অবস্থিত সিরাজগঞ্জ জেলা বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সব কটি কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। পরদিন সিরাজগঞ্জের গাড়িগুলোকে ঢাকায় ঢুকতে না দিয়ে সিরাজগঞ্জের দিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণে আবার দ্বন্দ্বের শুরু।

সিরাজগঞ্জ বাস, মিনিবাস ও কোচ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লিটন সরকার বলেন, ‘বিষটি মীমাংসা করার জন্য ঐক্য পরিষদের বেঁধে দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের আশানুরূপ কোনো সাড়া মেলেনি। তাই আমরা আজ সকাল থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার সব রুটে বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, কাভার্ড ভ্যানসহ সব ধরনের পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছি।’

লিটন সরকার বলেন, ‘দ্বন্দ্ব নিরসনে আমরা উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো সফর করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকনেতাদের সহায়তা চেয়েছি। দ্বন্দ্ব নিরসন না হয় তাহলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েন হাজারো মানুষ। সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন এলাকায় বাস কাউন্টারগুলোও রয়েছে বন্ধ। আজ সকালে সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন এলাকায় কথা হয় কজন যাত্রীর সঙ্গে।

ঢাকার যাত্রী হালিমা খাতুন বলেন, ‘ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎ বাস বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছি।’

দোকানি হেলেন হক বলেন, ‘দোকানের মাল কিনতে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল। কোনো বাসই পাচ্ছি না। সিএনজিচালিত অটোরিকশাও দেখছি না।’

আবুল কালাম বলেন, ‘আমার ট্রেন ধরনতে কড্ডা যাব, কিন্তু সিএনজি (অটোরিকশা) নাই। এখন কী করব?’