তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দুর্ভোগ

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: অজয় কুণ্ডু
মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। ছবি: অজয় কুণ্ডু

তীব্র স্রোতের কারণে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ১৮টি ফেরির মধ্যে চলছে মাত্র ৩টি রো রো ফেরি। চাহিদা অনুপাতে ফেরি চলাচল কম থাকায় ঘাটের দুপারে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। এ কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রী ও চালকেরা।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প নৌপথ হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিসির কর্মীরা। তাঁরা ঘাট এলাকায় মাইকিং করে বিকল্প নৌপথ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। এদিকে, আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পারাপারে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহলের বিরুদ্ধে।

আজ বৃহস্পতিবার কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে দেখা যায়, ঘাটের দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। চারটি ঘাটের সংযোগ সড়কে সারি ধরে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে যানবাহনগুলো। টার্মিনালগুলোও যানবাহনে ভরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা। ব্যক্তিগত যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাসগুলোও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রয়েছে। আর প্রতিটি ঘাটের পাশেই নোঙর করে রাখা হয়েছে ফেরিগুলো।

খুলনা থেকে চাল নিয়ে গত সোমবার ঘাটে এসেছেন মো. সাইদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসছি তিন দিন। যাব সিলেটে। ঘাটে এসে ফাঁইসা গেছি। ঘাটে লোকেরা কয়, ফেরি নাকি চলে না। আবার পাঁচ-ছয় হাজার টেকা ঘাটের লোকদের ঘুষ দিলে ফেরির সিরিয়াল আইনা দেয়। আমরা এত টাকা পামু কই। তাই ঘাটের টার্মিনালে আটকে পড়ে আছি।’

ঢাকাগামী ট্রাকের চালক তৈয়ব আলী বলেন, ‘চার দিন ধরে আটকা আছি। এটা তো আমাদের মালিকপক্ষ দেখবে না। নিজেদের জমানো টাকা খরচ করে এখানে থাকতে হয়, খাইতে হয়। খুব বিপদে আছি।’

পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি ঠিকমতো চলতে পারছে না। ছবি: অজয় কুণ্ডু
পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি ঠিকমতো চলতে পারছে না। ছবি: অজয় কুণ্ডু

বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, পদ্মা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র স্রোত। এতে ব্যাহত হচ্ছে ফেরি চলাচল। দ্বিগুণেরও বেশি সময় নিয়ে গতকাল বুধবার ৫টি ফেরি চলাচল করে। আজ ভোর থেকে স্রোতের তীব্রতা আরও বাড়ে। এ কারণে চলাচলকারী পাঁচটির ফেরির মধ্যে দুটি বন্ধ করে দেয় ঘাট কর্তৃপক্ষ। এখন রো রো ফেরি কাকলি, এনায়েতপুরীসহ তিনটি ফেরি চলছে। ফেরি স্বল্পতায় ঘাটের উভয় পারে পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে আট শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন। ঘাট এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা থেকে প্রচণ্ড গরমে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এই নৌপথে চলাচলকারী দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রী ও চালকেরা।

মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন বলেন, ‘ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। তীব্র স্রোতের কারণে আমরা ফেরি চালাতে পারছি না। ঘাট সচল রাখতে কোনো রকমভাবে তিনটি রো রো ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করছি। চলাচলরত ফেরিগুলোও দ্বিগুণ সময় নিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে। স্রোতের তীব্রতা না কমলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হচ্ছে না।’

ট্রাক পারাপারে চাঁদা তোলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাম হোসেন বলেন, ‘ট্রাকে চাঁদা তোলার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত না। আমরা এই বিষয় জানিও না। আমাদের কাছে এই বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি।’

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের উপপরিদর্শক কুশল কুমার সাহা বলেন, ‘ঘাটে যানবাহনের অনেক চাপ। আমাদের এই পারে পাঁচ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্রোতের কারণে ফেরিগুলো ঠিকমতো চলছে না। এতে ঘাটে দুর্ভোগ বেড়েছে। তবে যানবাহন পারাপারে চাঁদা তোলার বিষয়টি আমার নলেজে এখনো আসেনি। আমি ঢাকাতে আছি। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি দেখব।’