মাছের উৎপাদন বাড়াতে জলাশয় আগের অবস্থায় আনা হবে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা, ১৮ জুলাই। ছবি: পিআইডি
জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা, ১৮ জুলাই। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের আমিষের চাহিদা পূরণে দেশের জলাশয়গুলোকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে (কেআইবি) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৯-এর উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

‘মাছ চাষে গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে প্রতিবারের মতো এবারেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

পরে প্রধানমন্ত্রী কেআইবি প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ‘মৎস্য মেলা’র উদ্বোধন করেন। এই মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে দেশের সব জেলায়ও মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে মৎস্য চাষ, রেণু উৎপাদনসহ মৎস্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতীয় মৎস্য পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কার হিসেবে ৮ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে স্বর্ণপদক ও ৫০ হাজার টাকার করে চেক এবং ৯ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে রৌপ্যপদক ও ৩০ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হয়।

বাড়ির আশপাশের ডোবা, পুকুর ও জলাশয়কে ফেলে না রেখে মাছ চাষ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেছি। এখন দৃষ্টি পুষ্টির দিকে। বিল, ঝিল, হাওর, বাঁওড়, নদীনালায় পরিকল্পিতভাবে মাছ চাষ করতে হবে। মাছের চেয়ে এত নিরাপদ আমিষ আর নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিমধ্যেই আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের যত জলাশয়, পুকুর, খাল, বিল রয়েছে, সেগুলোকে আমরা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনব, যাতে করে আমাদের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেতে পারে।’

বর্তমান সরকারের শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশে আমরা নদীগুলোকে ড্রেজিং করছি যাতে করে এর প্রবাহ এবং নাব্যতা বৃদ্ধি পায়। আর পানির প্রবাহ বাড়লে মাছের উৎপাদন বাড়বে এবং একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত যেকোনো দুর্যোগের মোকাবিলা আরও সহজ হবে।’

প্রধানমন্ত্রী কেআইবি প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ‘মৎস্য মেলা’র উদ্বোধনের পর তা ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা, ১৮ জুলাই। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী কেআইবি প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী জাতীয় ‘মৎস্য মেলা’র উদ্বোধনের পর তা ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন, ফার্মগেট, ঢাকা, ১৮ জুলাই। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা গণভবনের লেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পোনা মাছ ছেড়ে মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন অভিযানের সূচনা করেন। তিনি সে সময়ই পাট, চামড়া, চা-এর সঙ্গে মাছকেও বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘“জাল যার জলা তার” আমরা এর ভিত্তিতে জেলেদের বিভিন্ন জলাশয় বরাদ্দ দিচ্ছি। সেখানে তারা মৎস্য উৎপাদন করে আমাদের চাহিদা মেটাচ্ছে। উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বাগেরহাটে চিংড়ি গবেষণা, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ ও গোপালগঞ্জে ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট গড়ে তুলেছি। যেন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, সে জন্য হাওরে পরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১০ বছরে মাছের উৎপাদন ৫৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। একে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করাই আমাদের লক্ষ্য।’

‘মিঠা পানির মৎস্য উৎপাদনে আমরা তৃতীয় স্থানে রয়েছি’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগামীতে আমরা যেন প্রথম স্থান লাভ করতে পারি, মিঠা পানির মৎস্য চাষে আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রথম স্থান অর্জন করার।’ আর সে কারণে এখন থেকেই তাঁর সরকার খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প স্থাপনে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে।

সরকারপ্রধান বলেন, দেশের জনসংখ্যার ১১ শতাংশের বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৎস্য সম্পদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রাণিজ আমিষের চাহিদার শতকরা ৬০ ভাগ জোগান দেয় মৎস্য খাত।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সমস্যা সমাধানের কারণে বিশাল সমুদ্রসীমায় (১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার) বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করে তাঁর সরকারের ব্লু-ইকোনমি সম্প্রসারণের উদ্যোগও তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে গণভবন লেকে মাছের পোনাও অবমুক্ত করেন। গণভবন, ঢাকা, ১৮ জুলাই। ছবি: পিআইডি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে গণভবন লেকে মাছের পোনাও অবমুক্ত করেন। গণভবন, ঢাকা, ১৮ জুলাই। ছবি: পিআইডি

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’র চিরায়ত পরিচয় ধরে রাখতে প্রাকৃতিক উৎসগুলো রক্ষায় তাঁর সরকার সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ও বনাঞ্চল রক্ষা, পানিসম্পদের উন্নয়ন ও নদীতে নাব্যতা রক্ষার জন্য বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মধুমতী, গড়াই, যমুনা, বুড়িগঙ্গা, কুশিয়ারা প্রভৃতি নদীতে নাব্যতা পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, মধুমতী ও গড়াই খননের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ততা হ্রাস পেয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সুন্দরবন এবং আশপাশের জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে।

কোরবানির ঈদ চলে আসায় প্রধানমন্ত্রী কোরবানির পশু কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় কোরবানি করে এর চামড়া, হাড় এমনকি রক্ত—যেগুলো বিভিন্ন কাজে লাগে, সেগুলোর সংগ্রহ নিশ্চিত করা যায় কি না, সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী এদিন জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে গণভবন লেকে মাছের পোনাও অবমুক্ত করেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরুর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইসুল আলম মণ্ডল অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। একই মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মোহম্মদ রাশিদুল হক এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।