জাবিতে গাছ কেটে হল নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ

গাছ কেটে পাঁচ হল নির্মাণের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮ জুলাই। ছবি: মাইদুল ইসলাম
গাছ কেটে পাঁচ হল নির্মাণের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮ জুলাই। ছবি: মাইদুল ইসলাম

হাজার গাছ কেটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের পাঁচটি হল নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্ট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ও অনুষদ ভবন ঘুরে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, যেকোনো অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনার প্রয়োজন হয়। ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পেও মহাপরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একটা মহাপরিকল্পনায় যে প্রক্রিয়াগত বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার, তার কিছুই এতে নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) প্রকল্প পাস করানোর জন্য তড়িঘড়ি করে শুধু ভবনের পরিকল্পনা করা হয়েছে, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি।

বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মহাপরিকল্পনা দেওয়া হয়েছে, তাতে প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। বিকল্প স্থান থাকা সত্ত্বেও একটি হল ঘিরে তিনটি হল ও সেই স্থানের গাছ কাটার পরিকল্পনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এর আগে গত ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। এগুলোর মধ্যে ছেলেদের তিনটি হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দক্ষিণ পাশে মেয়েদের দুইটি হল নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। এসব স্থানে প্রায় ১ হাজার ১৫০টি গাছ রয়েছে। উদ্বোধনের পর থেকেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এসব গাছ কাটার প্রতিবাদ করে আসছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহাপরিকল্পনা জনসম্মুখে উপস্থাপনের দাবিও জানান তাঁরা।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে মহাপরিকল্পনা উপস্থাপন ও উন্মুক্ত আলোচনা সভা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ওই আলোচনায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য যে বাজেট এসেছে, তা অবশ্যই বাস্তবায়নের দাবি রাখে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। যেহেতু মহাপরিকল্পনার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো পক্ষের কাছেই স্পষ্ট নয়, তাই পরিকল্পনাটি অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাপ্তরিক ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। সেই সঙ্গে মহাপরিকল্পনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করে তিন মাস পরে প্রকল্পটির কাজ শুরু করার দাবি জানান তিনি। এ দাবিতে সমর্থন জানান বেশ কয়েকজন শিক্ষক।

তবে আলোচনার শেষ পর্যায়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা সম্ভব নয় বলে জানান। নির্ধারিত স্থানেই হল নির্মাণ করা হবে বলে জানান তিনি। সেখানে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করেন। এরপর গাছ কাটার পরিকল্পনা বাতিলের দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা ও অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের দাবি মেনে নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভের ডাক দেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ঐক্যমঞ্চ।