৭ দিনেও ফেরিঘাট পার হতে পারেননি তাঁরা

শিমুলিয়া ঘাটে আটকে পড়ে ট্রাকচালকেরা অলস সময় পার করছেন। এক নম্বর ঘাট এলাকা, শিমুলিয়া, মুন্সিগঞ্জ। ছবি: ফয়সাল হোসেন
শিমুলিয়া ঘাটে আটকে পড়ে ট্রাকচালকেরা অলস সময় পার করছেন। এক নম্বর ঘাট এলাকা, শিমুলিয়া, মুন্সিগঞ্জ। ছবি: ফয়সাল হোসেন

পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ১৮টি ফেরির মধ্যে চলছে মাত্র তিনটি। চাহিদার চেয়ে ফেরি চলাচল কম থাকায় ঘাটের দুপারে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। এ কারণে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। পাশাপাশি মালবাহী বেশ কিছু ট্রাকচালক সাত দিনেও পার হতে পারেননি ফেরিঘাট। তবে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আগে ফেরি পারাপারের অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প নৌপথ হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মীরা। ঘাট এলাকায় মাইকিং করে বিকল্প নৌপথ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। ট্রাফিক পুলিশ ও ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আগে নদী পার করে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা।

শুক্রবার সকালে শিমুলিয়া-মাওয়া মহাসড়কের দেড় কিলোমিটারজুড়ে মালবাহী ট্রাকের সারি দেখা যায়। ফেরি পার হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অসংখ্য যানবাহন। টার্মিনালগুলোও যানবাহনে ভরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পণ্যবাহী ট্রাকের চালকেরা। ব্যক্তিগত যানবাহন ও যাত্রীবাহী বাসগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে আছে।

এ বিষয়ে শিমুলিয়া ফেরিঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. সাফায়েত হোসেন বলেন, ‘ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। তীব্র স্রোতের কারণে আমরা ফেরি চালাতে পাচ্ছি না। ঘাট সচল রাখতে কোনো রকমভাবে কখনো তিনটি, কখনো চারটি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করছি। এ অবস্থায় ঘাটে নয় শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে।’

বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ফেরিঘাটের উপমহাব্যবস্থাপক নাছির মোহাম্মদ সন্ধ্যা সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মায় পানি বেড়ে যাওয়ায় তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। স্রোত ঠেলে ফেরিগুলো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না। দ্বিগুণেরও বেশি সময় নিয়ে শুক্রবার ভোর থেকে চারটি ফেরি চললেও স্রোতের তীব্রতা বাড়ায় সন্ধ্যা থেকে মাত্র তিনটি ফেরি চলাচল করছে। স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চালানো হলে মাঝপথে ইঞ্জিন বিকল হতে পারে। এতে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি স্বল্পতার কারণে ঘাটে কয়েক দিন ধরে আটকে আছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। মুন্সিগঞ্জ, ১৯ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো
কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি স্বল্পতার কারণে ঘাটে কয়েক দিন ধরে আটকে আছে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো। মুন্সিগঞ্জ, ১৯ জুলাই। ছবি: প্রথম আলো

হামীম পরিবহনের চালক মো. শহিদুল ইসলাম শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ঘাটে এসেছি। যাত্রীরা গরমের মধ্যে বাসে থেকে অস্থির হয়ে যায়। দুপুরের দিকে তাঁরা বাস থেকে নেমে লঞ্চ দিয়ে চলে গেছেন। তাই খালি বাস নিয়ে ঘাটে বসে আছি।’

টঙ্গী থেকে মাদুরবোঝাই ট্রাক নিয়ে ১৩ জুলাই ঘাটে এসেছেন মো. তপন ঢালি। এই ট্রাকচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘাটে আসছি সাত দিন হলো। যাব মাদারীপুর টেকেরহাট। ঘাটে এসে ফাঁইসা গেছি। শুনলাম ফেরি নাকি চলে না। তাই ঘাটের টার্মিনালে আটকে পড়ে আছি।’

খুলনাগামী ট্রাকের চালক কাউসার আহম্মেদ বলেন, ‘ছয় দিন ধরে আটকে আছি। ঘাটে থেকে খরচের টাকা শেষ হয়ে গেছে। এটা তো মালিকপক্ষ দেখবে না। নিজের জমানো টাকা খরচ করেছি। বিকাশের মাধ্যমে বাড়ি থেকে টাকা এনে খরচ করছি। কবে নদী পার হতে পারব আল্লাহই জানে।’

মনিরুজ্জামান নামের আরেক ট্রাকচালক ঘুষ নিয়ে আগে পার হওয়ার অভিযোগ তুললেন ট্রাফিক পুলিশের বিপক্ষে। তিনিও পার হওয়ার অপেক্ষায় সাত দিন ধরে ঘাটপারে আটকা পড়েছেন। মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের পরে অনেকেই এসেছেন, নদীও পার হয়েছেন। তবে মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়ে পার হয়েছেন বলে শুনেছি। নদী পার হতে সাধারণত ঘাটে ১ হাজার ৮৫০ টাকা দিতে হয়। যেদিন ঘাটে ঢুকলাম, ট্রাফিক পুলিশকে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে। অল্প সময়ে নদী পার হতে হলে ঘাট কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত আরও দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হবে।’

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শিমুলিয়া ফেরিঘাটের ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যেখানে ফেরিই চলাচল করতে পারছে না, সেখানে কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে আগে সিরিয়াল পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি যৌক্তিক নয়। যদি কোনো পুলিশ চাঁদা দাবি করে, তাকে ধরিয়ে দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’