৬ দিন ধরে আটকে পণ্যবাহী শত শত গাড়ি

নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় দৌলতদিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। ক্যানাল ঘাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এম রাশেদুল হক
নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় দৌলতদিয়া ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। ক্যানাল ঘাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: এম রাশেদুল হক

নদীতে তীব্র¯স্রোতের কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। দুই ঘাটে আটকা পড়ছে শত শত যানবাহন। এর মধ্যে বেশির ভাগ আটকা রয়েছে পণ্যবাহী গাড়ি। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ছয় দিন ধরে নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় বসে আছে এমন শত শত গাড়ি।

আজ শনিবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ফেরিঘাট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ ফিডমিল পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা সারিতে ঢাকাগামী শত শত গাড়ি নদী পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়া ফেরিঘাট থেকে ক্যানাল ঘাট পর্যন্ত দুই কিলোমিটারজুড়ে পণ্যবাহী গাড়ির সঙ্গে বেশ কিছু যাত্রীবাহী বাসও আটকে আছে। তবে কর্তৃপক্ষ গতকাল শুক্রবার থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকাগামী যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে এই রুট বাদ দিয়ে বিকল্প রুট হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঘুরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় যাত্রীবাহী বাসের চাপ অনেকটা কমেছে। তবে পণ্যবাহী গাড়িগুলো আটকেই আছে।

যশোরের বেনাপোল থেকে আসা কলের লাঙল বহনকারী ট্রাকের চালক মো. মনির জানান, লাঙল নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর উদ্দেশ্যে গত সোমবার সকালে রওনা করে বেলা তিনটায় গোয়ালন্দ বাজারের কাছে যানজটে আটকা পড়েন। এরপর পাঁচ দিন ধরে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পথ সামনে এগিয়ে দৌলতদিয়া ক্যানালঘাটের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন।

আজ দুপুরে চালক মনির বলছিলেন, এই পাঁচ দিনে তাঁদের গড়ে প্রতিদিন দুজন লোকের পেছনে তিনবেলা খাবারদাবারসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রায় ৮০০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। অথচ এই খরচের টাকা মালের মালিক বা গাড়ির মালিক কেউ বহন করবেন না। যেভাবে ট্রাক পার করছে, তাতে আগামী তিন থেকে চার দিনেও ফেরিতে উঠতে পারবেন কি না সন্দেহ করছেন।

যশোর থেকে আসা আরেক ট্রাকের চালক বাবু পালোয়ান বলেন, সোমবার দুপুর থেকে নদী পাড়ি দিতে ঘাটে অপেক্ষা করছেন। এখনো তাঁদের গাড়ি ফেরিঘাট টার্মিনাল থেকে এক কিলোমিটার দূরে রয়েছে। তাঁদের এসব গাড়ি টার্মিনালে পৌঁছানোর পর তবেই ফেরির টিকিট কাটতে পারবেন। গোয়ালন্দ থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার পথ আসতে তাদের সময় লেগেছে পাঁচ দিন।

বাবু পালোয়ানের ধারণা, টার্মিনাল পৌঁছাতে আরও এক দিন সময় লাগতে পারে। এভাবে সপ্তাহ ধরে তাঁরা মহাসড়কেই গাড়িতে সময় পার করছেন। এতে করে খাওয়াদাওয়া ও প্রাকৃতিক কাজ সারতে নানা ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। কাছে যে টাকা ছিল, অনেকের শেষ হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

আজ দুপুর ১২টার দিকে ঘাটে দেখা যায়, বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কের উঁচুকরণের কাজ করছে। এ সময় ঘাটে কোনো ফেরি ছিল না। মাঝনদীতে ছোট-বড় চারটি ফেরি ভাসতে দেখা যায়। ৫ নম্বর ঘাটেও কোনো ফেরি নেই। তীব্র¯স্রোতের কারণে ঘাটের পন্টুনটি কাঁপছিল। এভাবে শুধু ৩ নম্বর ঘাট ছাড়া ১, ২ ও ৪ নম্বর ঘাটেও কোনো ফেরি দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি বলেন, পণ্যবাহী গাড়ি পারাপারে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অধিকাংশ গাড়ি গোয়ালন্দ মোড়ে আটকে দেওয়া হয়। পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী কিছু পরিবহন বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আজ সকালে দুটি ফেরি বের হয়ে বর্তমানে ১৩টি চলাচল করছে। স্রোতে পারাপার ব্যাহত হওয়ায় দুই ঘাটে বেশ কিছু গাড়ি এখনো আটকা আছে।