ভোটের প্রচারে সঙ্গী তাঁর মাইক আর বাইক
নির্বাচনে প্রার্থীরা তাঁদের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়ান। তাঁরা যেখানে যান তাঁদের সঙ্গে থাকে কর্মীরা। পথে-ঘাটে কর্মীরাই স্লোগান দিয়ে নির্বাচনী মাঠ মুখরিত করেন। কিন্তু এমন এক প্রার্থীর দেখা মিলেছে নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কোলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে, যার প্রচারে নেই কোনো কর্মী। তিনি একাই মোটরসাইকেলে মাইক লাগিয়ে নির্বাচনী এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর নাম এইচ এম আসাদুজ্জামান। তাঁর প্রতীক রজনীগন্ধা ফুল। আগামী ২৫ জুলাই এই ইউপিতে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেল কোলাহাটের তিন মাথা মোড়ে সড়কের পাশে এইচ এম আসাদুজ্জামানকে পথসভায় বক্তব্যে দিতে দেখা গেল। পথসভায় লোকজনের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
সরেজমিনে দেখা যায়, আসাদুজ্জামানের মোটরসাইকেলের পেছনে মাইকের লম্বা হর্ন লাগানো। তিনি নিজেই মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকায় নির্বাচনী প্রচার করছেন। যেখানে যাচ্ছেন তাঁর প্রচারের ‘স্টাইল’ দেখতে লোকজন ভিড় করছেন। নির্বাচনী এলাকার হাটে-বাজারে পথসভাও করছেন। এসব পথসভায় তাঁর বক্তব্যে লোকজন মনোযোগ সহকারে শুনছেন। ব্যতিক্রম পদ্ধতিতে নির্বাচনী প্রচার চালাতে দেখে লোকজন তাঁকে উৎসাহও দিচ্ছেন।
শুক্রবার বিকেলের কোলাহাটের পথসভায় আসাদুজ্জামান বক্তব্য ছিল এমন, ‘কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে দশ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আমিও তাঁদের মধ্যে একজন প্রার্থী। আমার প্রতীক রজনীগন্ধা। সবাইকে রজনীগন্ধার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এমন একজন প্রার্থী সতেরো বছর ধরে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি উপজেলা পর্যায়ে বিএনপির একজন প্রথম সারিরও নেতাও। অথচ নিজ দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সাহস পাননি। তিনি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।’
আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমার ঘর–সংসার নেই। তাই পিছু টানও নেই। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে ২৪ ঘণ্টায় নিজেকে জনসেবার কাজে নিয়োজিত রাখব। অন্য প্রার্থীরা তা পারবেন না। আপনারা যদি সত্যিকারের উন্নয়ন চান তাহলে আগামী ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনে আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।’
এইচ এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, অন্য প্রার্থীদের মতো তাঁর টাকা-পয়সা খরচ করার সামর্থ্য নেই। একজন শুভাকাঙ্ক্ষী তাঁকে প্রচার চালাতে মোটরসাইকেলটি দিয়েছেন। তিনি চিরকুমার। তাঁর আশা এই উপনির্বাচনে জনগণ তাঁকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
কোলা ইউপির একজন ভোটার মন্টু মিয়া বলেন, আসাদুজ্জামান তেমন পোস্টারও লাগাননি। তিনি একাই নিজের প্রচার চালাচ্ছেন। এই প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার এলাকায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মোট দশ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মো. লিখন, স্বতন্ত্র গোলাম রব্বানী, আবুল হাসনাত চৌধুরী, জাফর ইকবাল তাজু, শফিকুল ইসলাম, মোছা. সেলিনা মির্জা, আল মাহমুদুল হাসান বুলেট, হায়দার আলী, ফয়সল ওয়ালিদ ও এইচ এম আসাদুজ্জামান।
২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে এস্কেন্দার মির্জা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কোলা ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে এই ইউপির ছয় সদস্য ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এস্কেন্দারের বিরুদ্ধে ২২টি উন্নয়ন প্রকল্পের ৫১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তোলে। একপর্যায়ে এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর চেয়ারম্যান পদ চলে যায়।