গণ-অভ্যুত্থানেই খালেদাকে মুক্ত করতে হবে

চট্টগ্রাম নগরের নুর আহমদ সড়কে আজ বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। ছবি: সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম নগরের নুর আহমদ সড়কে আজ বিভাগীয় সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। ছবি: সৌরভ দাশ

আইনি লড়াই করে কিছু হবে না, আন্দোলন গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার তাগিদ দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। আজ শনিবার চট্টগ্রাম নগরের নুর আহমদ সড়কে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি নেতারা এই তাগিদ দেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশের ডাক দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি।

বিএনপির জনসভা ঘিরে পুলিশ আজ সকালে নুর আহমদ সড়ক, কাজীর দেউড়ি মোড়, লাভ লেনসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। বেলা দুটায় শুরু হয় জনসভা। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়াও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন আজ। দুপুর থেকে নগর ও বিভিন্ন জেলার নেতা-কর্মীরা জনসভায় যোগ দেয়। পুলিশ জনসভাস্থলে চারদিকে অবস্থান নেয়। এতে আতঙ্ক থাকলেও সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় নির্বিঘ্নে শেষ হয় জনসভা।

জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম জিয়া নির্জন, একাকিত্বের মধ্যে রয়েছেন। যেটা কখনোই স্বাধীন দেশের নাগরিকের প্রাপ্য নয়। আইনজীবীরা বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তার কোনো মেরিট (গুরুত্ব) নেই। তাঁকে হয়রানি ও আটকে রাখতে সাজানো ৩৬টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তিনি ঠিকভাবে হাঁটতে পারেন না, খেতে পারেন না। এই সরকার তাঁর চিকিৎসার জন্য ন্যূনতম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার দাবি করছি। কিন্তু এই কথা সরকার শুনছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে বেগম জিয়া দেশের পথে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন চারণ কবির মতো। গান গেয়েছেন গণতন্ত্রের। দীর্ঘ ৪০ বছর তিনি গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে চলেছেন। ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারকে পরাজিত করে জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন। এক-এগারোর বেআইনি সরকার তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল। পরে অনমনীয় মনোবলের কারণে তিনি আবার গণতন্ত্রে ফিরে এসেছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসলে যারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, যারা জনগণের ভোট ডাকাতি করে, শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি নেই। দেশে বন্যা হচ্ছে। কিন্তু বন্যা দুর্গতদের পাশে তাঁদের কাউকেই জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ চাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হোক। কিন্তু আদালতে ঢুকে খুন করা হচ্ছে। দিনদুপুরে মানুষ খুন হচ্ছে। আজকে কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই। সবখানেই মানুষকে নিপীড়ন করা হচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। মামলার বোঝা নিয়ে তাঁরা নিজ এলাকায় থাকতে পারেন না। কেউ চট্টগ্রামে, কেউ ঢাকায় গিয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। অনেকেই হকারের কাজ করছেন। আর এটাই বাস্তব। এই অবস্থার তৈরি করেছে, কারণ তারা গণতন্ত্রকে ভয় পায়। জনগণকেও ভয় পায়। ডাকাতির মাধ্যমে নির্বাচন করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই এই নির্বাচন কমিশনকে বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। মানুষের এখন নির্বাচনের ওপর আস্থাই নেই। কারণ, ভোট দিয়ে কী হবে? সব তো সিল মেরেই আগে নিয়ে যায়। এখন নেতা-কর্মীদের জনগণের কাছে যেতে হবে। ছড়িয়ে পড়তে হবে। জনগণের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য সংগ্রাম করতে হবে।

বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সৌরভ দাশ
বিএনপির সমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সৌরভ দাশ

‘বিখ্যাত অর্থনীতিবিদের’ নাম উল্লেখ না করে তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশ ঋণের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে। ভেতরে সব ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে লুট করে শেষ করে দিয়েছে। শেয়ার মার্কেটকে শেষ করেছে। এগুলো রুখতে গণ-আন্দোলন করতে হবে। এই সরকার বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে। মিডিয়াতে হস্তক্ষেপ করেছে। এখন খবর তাদের ইচ্ছামতো প্রকাশ হচ্ছে।

সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদার মুক্তি ও হাসিনার পতন একই সূত্রে গাঁথা। সরকার জামিন না দিয়ে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় সাজা দেওয়া হয়। অথচ সেই টাকা ব্যাংকেই আছে। এখন তা সুদে আসলে ছয় কোটি টাকা হয়েছে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদুদ আহমদ আহমদ বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করা সরকারের এজেন্ডা। কিন্তু শত বছরেও তা তারা পারবে না। তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থতার জন্য সরকার দায়ী। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠিয়ে নোয়াখালীর চরে স্থায়ী আবাস নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।

আজকের সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আমরা সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে পারলেই খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। কারণ শেখ হাসিনা এখন বিচারপতি, তিনিই পুলিশের আইজি, দুদকের চেয়ারম্যান। কাজেই যারাই খালেদা জিয়ার মুক্তিতে বাধা হবে, তাদের ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে।

বিএনপির সমাবেশের একাংশ। ছবি: সৌরভ দাশ
বিএনপির সমাবেশের একাংশ। ছবি: সৌরভ দাশ

আজ চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন আজকের সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। আমরা বিচার পাব না জেনেই বিচার কার্যে গিয়েছি। নির্বাচনে ভোট চুরি হবে জেনেও নির্বাচনে গিয়েছি। কারণ বিশ্ব যাতে জানতে পারে আমাদের অধিকার চুরি হয়ে গেছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সরকার রাতের ভোটে ক্ষমতায় এসেছে। জনগণকে ভয় পায় বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতায় কারওর জন্য চিরস্থায়ী নয়।

বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তবে আগামী ৭ দিনের মধ্যে খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পেয়ে এক মাসের মধ্যে জনতার মাঝে ফিরে আসবেন বলে ঘোষণা দেন মাহবুব উদ্দিন খোকন।


আজ আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবদুল আউয়াল মিন্টু, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খন্দকার, সুকুমার বড়ুয়া, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।