গোখাদ্যে ট্যানারি বর্জ্য আছে কি না, পরীক্ষা করবেন অধ্যাপক ফারুক

আ ব ম ফারুক
আ ব ম ফারুক

ভোগ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পরীক্ষার পর এবার গোখাদ্যে ট্যানারি বর্জ্যের উপস্থিতি পরীক্ষার ঘোষণা দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল রিসার্চ সেন্টারের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তবে পরীক্ষাটি ব্যয়বহুল হওয়ায় এর জন্য বেশ কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আ ব ম ফারুক এই ঘোষণা দেন। গত মাসে ভোগ্যপণ্যের, বিশেষ করে দুধের, নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন প্রকাশের পর অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে ‘মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তার হুমকি ও অমর্যাদার প্রতিবাদে’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আ ব ম ফারুক বলেন, ‘অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াও খাদ্যে লেড, ক্যাডমিয়াম কিংবা ক্রোমিয়ামের মতো আরও কিছু ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যাচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এর অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও আছে, ট্যানারির বর্জ্য। এতে থাকে প্রচুর পরিমাণে লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম থাকে। আমরা জানি যে মুরগিকে ওই বর্জ্য খাওয়ানো হয়, কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে যে গোখাদ্যের মধ্যেও সেটা আছে কি না। ঠিক করেছি, এটাও আমরা দেখব। ট্যানারির বর্জ্যও গোখাদ্যে দেওয়া হচ্ছে কি না, দিলে কতটুকু দেওয়া হচ্ছে, তা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।’ অধ্যাপক ফারুক আরও বলেন, ‘এটা আমরা দেখব জনস্বার্থে। অন্য কোনো স্বার্থে নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ডেইরি ফার্ম নেই, এখানকার কেউ বিদেশি এজেন্টও নন। একাডেমিক কাজের পাশাপাশি আমরা এমন কিছু জনহিতকর কাজও করব।’

তিনটি সমস্যার সমাধান করতে পারলে দেশীয় দুধ নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা আর থাকবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক ফারুক। এগুলো হচ্ছে পাস্তুরিত দুধ জীবাণুমুক্ত করা, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং পশুখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান মেশানো বন্ধ করা। এক সপ্তাহের মধ্যেই এই তিনটি কাজ করা সম্ভব উল্লেখ করে অধ্যাপক ফারুক বলেন, সরকারি দপ্তরগুলো একটু প্রস্তুত হয়ে মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে যদি বলে, ‘কেউ এ ধরনের কাজ করবেন না’, তাহলেই হয়ে যায়।

আ ব ম ফারুক অভিযোগ করে বলেন, ‘কোনো কোনো কর্মকর্তা বা কোম্পানির মালিকপক্ষ বলার চেষ্টা করে যে দুধ দেওয়া প্রাণীটি অসুস্থ হলে তাকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয় এবং সেই সূত্রে দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক চলে আসে, তাই এখানে কিছু করার নেই। কিন্তু এটি সত্য নয়, করার আছে। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার কোনো প্রয়োজন নেই। আসুন, সত্য দিয়েই আমরা তর্ক-বিতর্ক করি এবং সমাধানের দিকে যাই। সত্যকে অবলম্বন করেই আমাদের মুক্তির দিকে যেতে হবে।’

অসুস্থ পশুর দেহে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ প্রসঙ্গে এই অধ্যাপক বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পশুর মাংস ও দুধ খাওয়া যায় না। এই সময়টি হচ্ছে কমপক্ষে ২১ দিন। এই ২১ দিনের মধ্যে দুধ মানুষকে পান করানোর জন্য দেওয়া যাবে না। পাস্তুরিত দুধ হিসেবে এটাকে পাঠানো যাবে না। দুধ সংগ্রহাকেরা যাতে এই নিয়ম মানেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয় হলো, পশুর চিকিৎসার জন্য হিউম্যান (মানুষ) অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা যাবে না।

গোখাদ্যের বিষয়ে অধ্যাপক ফারুক বলেন, গরুকে যে ঘাস, ফল, কচুরিপানা, লতাপাতা ইত্যাদি খাওয়ানো হয়, এগুলোতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক নেই। সমস্যাটা তখনই হয়, যখন ফিড খাওয়ানো হয়। তিনি বলেন, ‘আজকাল মাঠের খামারিরাই বলছেন, ফিডের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক আছে। উৎপাদকেরা গোখাদ্যেও অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে দিচ্ছেন। বাংলাদেশের আইনে এটা নিষেধ। তবুও এটা হচ্ছে, কারণ মনিটরিংটা হচ্ছে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর কিছু কিছু কর্মকর্তা এগুলো মনিটর করছেন না। ফিডের মধ্যে যেন অ্যান্টিবায়েটিক না থাকে, তা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে। যেসব উৎপাদক ফিডে অ্যান্টিবায়োটিক মেশাচ্ছেন, তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আ ব ম ফারুক বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার একটা হুমকি আছে। আইনগত ব্যবস্থা যদি কেউ নেন, কোনো অসুবিধা নেই, আমরাও আইনের সামনে দাঁড়াব। তবে আমি এখন পর্যন্ত কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিইনি। আমার কাছে একটা উকিল নোটিশ এসেছিল। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যতটুকু বলা দরকার, তা আমি নিজের বিবেচনা অনুযায়ী বলেছি। যথাসময়েই সেটি আমি পাঠিয়ে দিয়েছি। হুমকির বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি, সেটা পরে দেখা যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন উপস্থিত ছিলেন।