হাতিম গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

দুদক
দুদক

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রামের হাতিম গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজল-ই হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনি সরকারের সঙ্গে করা চুক্তির শর্ত ভেঙে কুরাইশি স্টিলস মিল লিমিটেডের সব সম্পত্তি বিক্রি শেষে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। শনিবার বিকেলে দুদকের সমন্বিত খুলনা জেলা কার্যালয়ে ওই মামলা করেন চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক নূরুল ইসলাম।

এই মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে নয়জনকে। এর মধ্যে সম্পত্তি বিক্রি করার অভিযোগে ফজল-ই-হোসেনসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। আর জমিসহ সম্পত্তি কেনার অভিযোগে আসামি হয়েছেন খুলনার মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক শেখ মাহবুবুর রহমান। জমি কেনায় সাক্ষী থাকায় মাহবুবুর রহমানের স্ত্রী আমাতুল্লাহ এস হোসেন ও মাহবুব ব্রাদার্সের কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলামকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, খুলনা নগরের লবণচরা এলাকায় ৬ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর ১৯৬৯ সালে ব্যক্তি মালিকানায় কুরাইশি স্টিল লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা–পরবর্তী অবাঙালি মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয় এবং তা শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্টিল মিলস করপোরেশন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের (বিএসইসি) নিয়ন্ত্রণে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়।

১৯৮৪ সালে সরকারের গৃহীত বেসরকারীকরণ নীতির আলোকে জনস্বার্থে কুরাইশি স্টিল লিমিটেডের আগের শেয়ার হোল্ডারদের কাছে প্রতিষ্ঠানটি শর্ত সাপেক্ষে বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাবে সংশ্লিষ্টরা সম্মত হওয়ায় ১৯৮৪ সালে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কিছু শর্ত সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার হোল্ডারদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। ওই চুক্তিতে শেয়ার হোল্ডারদের পক্ষে স্বাক্ষর করে প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজল-ই-হোসেন। একই সময় বিএসইসির সঙ্গেও কিছু শর্ত পালনের অঙ্গীকারে মালিকপক্ষের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী সরকার বা বিএসইসির শেয়ার ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ ও ক্রেতা পক্ষ ফজল-ই-হোসেনসহ অন্যান্য শেয়ার হোল্ডারদের নামে অবশিষ্ট ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ শেয়ার হস্তান্তর করা হয়।

ওই চুক্তির প্রধান বিষয় ছিল, উভয় চুক্তির ক্রেতাপক্ষ প্রতিষ্ঠানের সব দেনা ও বিএসইসির পাওনা পরিশোধ করবে। যত দিন পরিশোধ করবেন না, তত দিন বিএইসির প্রতিনিধির সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। সরকারের অনুমতি ছাড়া ক্রেতারা তাঁদের শেয়ার হস্তান্তর ও মিলের পরিবর্তন করতে পারবে না।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির ক্রেতা ফজল-ই-হোসেনসহ অন্যরা শেয়ারের মূল্য পরিশোধ না করে শেয়ার হস্তান্তর করে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করেন। এ কারণে শিল্প মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালে বিক্রয় চুক্তি বাতিল করার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেননি ক্রেতারা। পরবর্তী সময়ে একই বছরের মে মাসে ১৯৮৪ সালে সম্পাদিত চুক্তি দুটি বাতিল করে ক্রেতাদের দেওয়া আংশিক পরিশোধিত মূল্য সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়। সে কারণে প্রতিষ্ঠানটির সব শেয়ার সরকার বা বিএসইসির অনুকূলে বহাল থাকে। ওই বছরের জুন মাসে খুলনা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে সরকারের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। বর্তমানে কুরাইশি স্টিল লিমিটেড বিএসইসির মালিকানায় পরিচালনাধীন রয়েছে।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, খুলনার লবণচরা মৌজার সংশ্লিষ্ট তফসিলভুক্ত জমিতে কুরাইশি স্টিল লিমিটেড ছিল। কিন্তু বর্তমানে তাতে মিলের যন্ত্রপাতিসহ অবকাঠামোর কোনো অস্তিত্ব নেই।

কুরাইশি স্টিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজল-ই-হোসেন ২০১১ সালে খুলনা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দানপত্র দলিলের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ৩ দশমিক ৪২ শতক জমি তাঁর ভাই এনায়েত হোসেনের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির আরও ৩ দশমিক ৩৬ শতক জমি ৩ কোটি ৫ লাখ টাকায় শেখ মাহাবুব রহমানের কাছে সাবকবলা দলিল মূলে বিক্রি করেন। দলিলে সাক্ষী ছিলেন মাহবুব ব্রাদার্সের কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার ও স্ত্রী আমাতুল্লাহ এফ হোসেন।

পরে এনায়েত হোসেনও প্রতিষ্ঠানটি ৩ দশমিক ৪২ শতক জমি ৩ কোটি ৫ লাখ টাকায় শেখ মাহাবুব রহমানের কাছে বিক্রি করেন। ওই দলিলে সাক্ষী ছিলেন ফজল-ই-হোসেন ও খুলনা নগরের গোবরচাকা এলাকার মো. মজিবর রহমান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, চুক্তি ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠাটি বন্ধ, যাবতীয় কলকবজা ও যন্ত্রপাতি গোপনে বিক্রি এবং সরকারি মিলের জমির মালিকানার প্রকৃত তথ্য গোপন করে তা বিক্রি করা হয়েছে।

দুদকের খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক নাজমুল হাসান বলেন, বিশেষ কাজে তিনি খুলনার বাইরে আছেন। তবে মামলা হওয়ার কথা শুনেছেন।