১৮২তম বর্ষপূর্তিতে নবীন প্রবীণের মিলনমেলা

কুমিল্লা জিলা স্কুলের ১৮২ বছর পূর্তিতে কেক কাটা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।  ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লা জিলা স্কুলের ১৮২ বছর পূর্তিতে কেক কাটা হয়। গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ছবি: প্রথম আলো

কাজী শারমিন আউয়াল ২৫ বছর আগে শেষবার বিদ্যালয়ের পোশাক পরে এসেছিলেন। গতকাল শনিবার সেই সাদা জামা ও প্যান্ট পরে আসেন তিনি। তবে এবার এসেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে। তিনি এই বিদ্যালয়ের ১৯৯৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। শুধু তিনি নন, তাঁর মতো শত শত প্রাক্তন শিক্ষার্থী কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার ১৮২তম বর্ষপূতি উদ্‌যাপন উপলক্ষে তাঁদের সেই ফেলে যাওয়া ক্যাম্পাসে আসেন। তাঁদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় বর্তমান শিক্ষার্থীরা। নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয় ধর্মসাগরপাড়ের বিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

 কুমিল্লা জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৮৩৭ সালের ২০ জুলাই। বর্তমানে ২ হাজার ৫৭ জন শিক্ষার্থী ও ৫৩ জন শিক্ষক রয়েছেন।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১৮২টি বৃক্ষ রোপণ করে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। সেটি নগরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার ক্যাম্পাসে গিয়ে শেষ হয়। এরপর বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ১৮২ পাউন্ড ওজনের কেক কাটেন প্রধান অতিথি কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস) এলাকার সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন।

পরে বিদ্যালয়ের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা জিলা স্কুল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি নাজমুল হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, বিচারপতি মামনুন রহমান, প্রাক্তন ছাত্র গোলাম ফারুক ও প্রধান শিক্ষক রাশেদা আক্তার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ১৯৮০ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ইমরান বাচ্চু।

অনুষ্ঠানে সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, কুমিল্লা জিলা স্কুল দেশের সীমানায় আবদ্ধ নয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। এই বিদ্যালয়ের ছাত্র এখন দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক, সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিমও এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।

১৯৪৫ সালে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন আবদুল হাকিম। তিনি পরে এই বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করেন। ৮০ বছর বয়সী আবদুল হাকিম বলেন, দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে এসে ভালো লাগছে।

১৯৫৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন সাজেদুর রহমান, এ টি এম শামসুল আলম ও গোলাম গাউছ। বিদ্যালয় ছাড়ার পরও বন্ধুত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। তাঁরা বলেন, জিলা স্কুলই তাঁদের উন্নত জীবনের সন্ধান দিয়েছে। এই বিদ্যালয়ের কাছে তাঁরা ঋণী।

 ১৯৬৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী গোলাম ফারুক বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ের ১৩৯ জন শিক্ষার্থী একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।’

 ১৯৯৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী মিনহাজ রহমান, মুরাদ আনিস, নাসির উদ্দিন, সাব্বির আহমেদ ও একরামুল হক বলেন, ‘বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে এসে বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কাছে পেয়ে ভালো লাগল। যেন স্কুলজীবনের প্রাণ ফিরে পেলাম।’ পরে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা সংগীত পরিবেশন করেন।