জলাবদ্ধতায় ভোগান্তির শেষ নেই

ভাঙাচোরা সড়ক। তার ওপর পানিতে তলিয়ে আছে। পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত বৃহস্পতিবার সড়কের আনসার ক্যাম্প এলাকায়।   প্রথম আলো
ভাঙাচোরা সড়ক। তার ওপর পানিতে তলিয়ে আছে। পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। গত বৃহস্পতিবার সড়কের আনসার ক্যাম্প এলাকায়। প্রথম আলো

নেত্রকোনা শহরের নাগড়া মধ্যপাড়া সড়কটি শুরু হয়েছে নেত্রকোনা-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে আনসার ক্যাম্প ও বিএডিসি কার্যালয়ের মাঝ থেকে। সড়কটি নাগড়া মীরবাড়ি সড়ক নামেও পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কের বেহাল অবস্থা। বর্ষার শুরু থেকে জলাবদ্ধতা সেখানে। এতে করে স্থানীয় মানুষ, পথচারী ও যানবাহনের চালকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি মেরামতের জন্য বারবার আবেদন জানালেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

তবে পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, রাস্তাটি নতুন করে সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে দ্রুত সময়ের মধ্যে এর অনুমোদন হবে। এ ছাড়া সাময়িকভাবে সড়কটির পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আনসার ক্যাম্প ও বিএডিসির কার্যালয় থেকে শুরু হওয়া সড়কটি নাগড়া নদীর পাড়ের সড়কে গিয়ে মিলিত হয়েছে। এই সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, আর প্রস্থ কোথাও ৬ ফুট আবার কোথাও ৭–৮ ফুট। আবাসিক এলাকার এ সড়কের দুই পাশে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যালয়, জেলা পাট পরিদর্শকের কার্যালয়, মসজিদ, দোকানপাটসহ অসংখ্য বহুতল ও কাঁচা–পাকা ভবন রয়েছে। এই পথ দিয়ে প্রতিদিন হাসপাতালে রোগী, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীসহ ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার মানুষ চলাচল করে। কিন্তু সড়কটি জলাবদ্ধ থাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই। একবার বৃষ্টি হলে সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়। পানি সরতে ১৫ থেকে ২০ দিন লেগে যায়।

গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের শুরু থেকে প্রায় ২৫০ মিটার অংশে হাঁটুপানি। ময়লা-আবর্জনা জমে নোংরা এই পানি মাড়িয়ে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে ও পথচারীরা চলাচল করছে। সড়কের পাশে থাকা বিএডিসির সীমানাপ্রাচীরের প্রায় ২০ ফুট ধসে সড়কে পড়ে আছে। এ ছাড়া আরও প্রায় ১০০ ফুট প্রাচীর হেলে গেছে। প্রাচীর পড়ে গিয়ে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদাদ লাবিব জানায়, বিকল্প পথ না থাকায় এ সড়ক দিয়েই তাদের প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয়। বেশি বৃষ্টি হলে হাঁটুপানি জমে যায়। ময়লা পানিতে প্রায়ই পোশাক নষ্ট হয়। মাঝেমধ্যে শিশুদের পরিবারের বড়রা কাঁধে করে রাস্তা পার করে দেন।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী সৈয়দা আইভি বলেন, ‘রাস্তাটি এখন আমাদের দুঃখে পরিণত হয়েছে। এখানে রিকশাও আসতে চায় না।’

এলাকার বাসিন্দা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সৈয়দ শামছুল হক বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটিতে বর্ষা শুরু হলেই এমন অবস্থা হয়। প্রতিবারই পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। স্থানীয় লোকজন ইট, সুরকি ও বালুর বস্তা ফেলে কিছুটা চলাচলের উপযোগী করেন। কিন্তু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। আবর্জনা পচে পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক রোয়েনা রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেখেন, কী অবস্থা। এখানে মানুষ থাকতে পারে! বৃষ্টির পানিতে ভেসে আসা ময়লা জড়ো হয় সড়কে। দুর্গন্ধে টেকা যায় না। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পানি ও ময়লা কোনোটাই সরতে পারে না। এই এলাকায় এখন ভাড়াটেরাও থাকতে চাইছেন না। নিজেদের বাসাবাড়ি না থাকলে আমরাও অন্যত্র চলে যেতাম।’

এলাকার জাহিদ হাসান বলেন, ‘বারবার পৌর কর্তৃপক্ষকে বলার পরও সড়কটি মেরামত হচ্ছে না। নিয়মিত কর পরিশোধ করেও আমরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’

এ ব্যাপারে পৌর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী নুরনবী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এক কিলোমিটারের মতো এই সড়কটির পাশে নালার ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি সহজে নিষ্কাশিত হয় না। সড়কের দুই পাশে জায়গা না থাকায় নালা করা যাচ্ছে না। তবে নতুন করে এই সড়কটি সংস্কার করতে তৃতীয় নগর পরিচালন উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউজিআইপি-৩) আওতায় গত মার্চ মাসে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেটি এখনো অনুমোদন হয়নি।