নান্দাইলে চিকিৎসায় সহায়তার নামে মোবাইল ফোনে প্রতারণা

একটি মামলায় কারাবন্দী মো. শামীম মিয়া হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁর দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে। প্রয়োজন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। ৪০ হাজার টাকা সরকারিভাবে দেওয়া হবে। বাকি ৭০ হাজার টাকা বিকাশ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এখনই পাঠাতে হবে।

১৩ জুলাই এ ধরনের জরুরি ফোন পান কারাবন্দী শামীমের (৩০) শ্বশুর মো. ফাইজুল ইসলাম। শামীম ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের চংভাদেরা গ্রামের মো. মজনু মিয়ার ছেলে। তিনি একটি ধর্ষণ মামলার আসামি হিসেবে ময়মনসিংহ কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

এভাবে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে শামীমের শ্বশুর ফাইজুল ইসলাম গত শুক্রবার নান্দাইল মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। পুলিশ অভিযোগটি তদন্ত করছে।

অভিযোগে ফাইজুল উল্লেখ করেন, ১৩ জুলাই তাঁর এলাকার ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিনের কাছে ০১৯৫২০৮৪৬২৬ নম্বর থেকে একটি কল আসে। ফোনদাতা জানান, শামীম কারাগারে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁকে কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসা করাতে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লাগবে। এর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা সরকারিভাবে দেওয়া হচ্ছে। বাকি ৭০ হাজার টাকা জরুরিভাবে পাঠাতে হবে। ওই ফোনদাতা নিজেকে কথিত কারা কর্মকর্তা (জেলার) ও চিকিৎসকের দুটি মোবাইল ফোন নম্বর দেন। পরে তিনি (ফাইজুল) ওই দুটি নম্বরে শামীমের অসুস্থতা নিয়ে কথা বলেন।

ফাইজুলের অভিযোগ, জামাতার অসুস্থতার খবর শুনে তিনি এতটাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন যে ঘটনাটি একটি প্রতারণা হতে পারে, তা তাঁর ভাবনাতে আসেনি। ফোন পেয়ে তিনি স্থানীয় একটি বাজারে গিয়ে প্রতারকদের দেওয়া একাধিক নম্বরে ৭০ হাজার টাকা পাঠান। টাকা পাঠানোর কিছুক্ষণ পর শামীমের শারীরিক অবস্থা জানার জন্য কথিত চিকিৎসকের নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে কথিত কারা কর্মকর্তার নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়। সন্দেহ হলে টাকা পাঠানোর নম্বরগুলোতে ফোন করলে সেগুলোও বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, শামীম কারাগারে ভালো আছেন। তখন তিনি প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ কারাগারের ডেপুটি জেলার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতারক ও প্রতারণার হাত থেকে সাবধানে থাকার জন্য কারাগারের দৃশ্যমান স্থানগুলোতে সতর্কবার্তা লেখা সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে। এ ছাড়া কোনো কারাবন্দী অসুস্থ হলে তাঁর চিকিৎসা সরকারিভাবে কারা কর্তৃপক্ষই করে থাকে। এ বিষয়ে তিনি সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ জুন নান্দাইল মডেল থানার পুলিশ উপজেলার কালীগঞ্জ বাজারের কাছে একটি ক্লাবঘর থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করে। ওই তরুণীর অভিযোগ, কালীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী মো. শামীম মিয়া তাঁকে বিয়ে করার কথা বলে দোকানে আটকে ধর্ষণ করেছেন। এ ঘটনায় তরুণী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার খবর শুনে শামীম পালিয়ে যান। পরে র‌্যাব-১৪-এর একটি দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে শামীমকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।